Wednesday, December 28, 2016

নাসিকের অভিজ্ঞতা, জাতীয় রাজনীতিতে প্রত্যাশা

আবুল মোমেন

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনটি সরকার একটা টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছিল বলে মনে হয়। অনেকের ভাষ্য মতে এসিড টেস্ট। সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলা যায়। ইতিপূর্বে সিলেট, বরিশাল, রাজশাহীতে এবং পরে গাজিপুরে মেয়র নির্বাচনে হোঁচট খেয়ে সরকার কৌশল পাল্টেছিল। বিশেষভাবে রাজশাহী ও গাজিপুরে পরাজয়ে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিজয় সম্পর্কে সন্দিহান হওয়ার কারণ ঘটেছিল। রাজশাহীর লিটন কাজ দিয়ে মানুষের মন এতটাই জয় করেছিলেন যে পরিচিত অনেক বিএনপিপন্থীকেও দেখেছি তাঁকে ভোট দিতে চট্টগ্রাম থেকে পরিবার নিয়ে সুদূর রাজশাহী যেতে। আর গাজিপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমতউল্লা খান বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক এম. এ. মান্নানের তুলনায় পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে জনপ্রিয় স্থানীয় নেতা ছিলেন। তাঁদের পরাজয়ে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াত চক্রের নেতিবাচক ভূমিকা সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। এমনকি তারা পরিবর্তনের জন্যে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমকেও হিসেবের মধ্যে নেয় নি। অবশ্য ঐ সময়ে সরকারের উন্নয়ন কাজ ও দেশের উন্নতির চিত্র মানুষের কাছে স্পষ্ট ছিল না। তখন মাত্র দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে উত্তরণ ঘটতে শুরু করেছে। তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে এসব বিষয় আলোচিত হচ্ছিল। কিন্তু স্থানীয় ভোটার পর্যায়ে তখনও তা ততটা দৃষ্টিগোচর হয় নি। ফলে সরকারের দাপটে অসহায় বিএনপি যেন সহানুভূতি টেনেছিল মানুষের।
এর পরে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচন হয়েছে তিনটি - ঢাকার দুটি এবং চট্টগ্রামের একটি। এবারে প্রার্থী নির্বাচনে সরকার দলীয় পরিচয়ের বৃত্ত থেকে বাইরে থাকতে পেরেছিল। তবে নির্বাচনে বিএনপির জন্যেও সম-সুযোগের ক্ষেত্র তৈরি ছিল এমন কথা বলা যাবে না। ভোটাররা সরকারের উন্নয়নের বারতাটা ততদিনে পেতে শুরু করেছে, আবার সরকারের কঠোর অবস্থানের মুখে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অপারগতাও অস্পষ্ট থাকে নি। ভোট কম পড়েছিল, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হয় নি। বিএনপি অভিযোগ তুলে মাঠ ছেড়ে দিয়েছিল।
এর পরে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন প্রায় একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। এর ফলে বহু কষ্টে অর্জিত গণতান্ত্রিক ভোটাধিকারের কার্যকারিতা সম্পর্কে জনমনে সংশয়ের কারণ ঘটেছিল। মানুষ ভোট বা নির্বাচনে আগ্রহ হারাতে থাকে।
এ সময়ে আরো দুটি ঘটনা ঘটে। সত্যিই দেশে উৎপাদন, বিশেষত কৃষি উৎপাদনে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জিত হয়ে সাধারণের জীবনে স্বস্তি এসেছে। শহরগুলোয় রাস্তাঘাট, উড়ালপুল, দৃষ্টিগোচর হতে শুরু করেছ, সারা দেশে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক কার্যকর উন্নয়ন ঘটেছে। সরকারও এ সাফল্যকে এই প্রথম ভালোভাবে প্রচারণায় কাজে লাগাতে পেরেছে। মানুষ সরকারের প্রতি, বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ফিরে পেতে থাকে।
অপর বিষয়টি হল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, শাস্তি ও শাস্তি কার্যকরের পাশাপাশি এই সূত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে প্রচারণার নতুন পরিবেশ তৈরি। এতে নতুন প্রজন্ম, যারা নতুন ভোটার হচ্ছে - তাদের প্রায় সত্তর হাজার এবারে নাসিক নির্বাচনে ভোটার ছিলেন - তারা বিএনপির জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ থাকার বিষয়টি ভালোভাবে নেয় নি। আমার ধারণা এরা নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে আইভির পক্ষে ভোট দিয়েছে।
তৃতীয় একটি বিষয়ও নজরে রাখা দরকার। গত প্রায় আট বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ভাবমূর্তি আরো বাড়াতে পেরেছেন। প্রথম থেকেই, সেই বিডিআর ঘটনা থেকে, তিনি সাহস ও দক্ষতার সাথে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন ও মোকাবিলা করেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাঁর নেতৃত্ব প্রশংসিত ও স্বীকৃত হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার বিষয়ে বিএনপির অস্পষ্ট সন্দেহজনক ভূমিকা খুলে ধরার ব্যাপারে তাঁর দৃঢ়তা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।
স্বীকার করতেই হবে স্বাধীনতার পরে এই প্রথম যেন সবরকম প্রশাসনিক শাখা ও স্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেরা বেশি সংখ্যায় দায়িত্বে এসেছেন। মনে হয় বিচার বিভাগও এক্ষেত্রে সঠিক অবস্থানে আছেন।
অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সুফল সাধারণের হাতে আসতে থাকলে নিম্ন পর্যায়ে দলীয় রাজনীতির অন্ধ অনুসারী থাকার প্রবণতা কমে আসে। সাধারণত রাজনীতি অল্প কিছু মানুষের জন্যে লাভজনক বিষয় হয়, অধিকাংশকে এ থেকে লাভ আদায়ে অনেক ঝুঁকি ও অপবাদ সইতে হয়। এর চেয়ে নানা রকম উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অর্জনের পথগুলো এখন অনেকটা দৃশ্যমান। তরুণরা আজ রাজনীতির চেয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহী হচ্ছে বেশি। তারা জানে বর্তমান স্থিতিশীলতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্ত হাতের শক্তিশালী শাসন এক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হবে। ফলে বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও আম মানুষ, বিশেষত উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা ও তারুণ্যশক্তি, এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় নি। আপাতত ঘামাবে বলেও মনে হয় না। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটানো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বিএনপি যদি জামায়াত ও ইসলামি ঐক্য জোটের মত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ দলগুলোকে সঙ্গে রেখে জনগণকে কাছে টানতে চায় তাহলে খুব কাজ হবে না।
শেখ হাসিনা প্রায় একক সিদ্ধান্তেই বড় রকমের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর প্রশাসন ও রাজনীতি পরিচালনা করছেন। তিনি সর্বাধিক জোর দিয়েছেন অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর, তাতে বিশেষত জ্বালানি খাতের উন্নয়নের প্রশ্নে - অনেক মহলের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েও - বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে চান। কিন্তু এর কোনো কোনোটি, অন্তত রামপাল প্রকল্প, শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে ভোগান্তিতে ফেলতে পারে, কারণ এটি সত্যিই বিশ্ব-ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ক্ষতিগ্রস্ত  করবে। তবে আপাতত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লে ও সঞ্চালন ঠিকঠাকভাবে চললে তিনি লাভবান হবেন। শহরে দৃশ্যমান উন্নয়নে জোর দিচ্ছেন, গ্রামেও উন্নয়দের ছোঁয়া পৌঁছে গেছে, তাও দৃশ্যমান ভাবেই। সামাজিক সব সূচকে উন্নতি দৃশ্যমান - গড় আয় আর গড় আয়ুর অগ্রগতি এককথায় চমকপ্রদ।
শেখ হাসিনা এখন দুর্নীতি দমনের বিষয়ে আন্তরিক হতে পারেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস এতটাই বেড়েছে যে দলের অনেক বিশৃঙ্খলাকারী সদস্যের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ার অগ্রাধিকার মেনে নিচ্ছেন। এতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের ও বিত্ত অর্জনের অবৈধ তৎপরতা কমে এলে আওয়ামী লীগ আরো লাভবান হবে। অবস্থান শক্ত হওয়া এখন সরকার মানবাধিকার ও আইনের শাসনের বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারেন। এতে যেসব অপবাদ ও অপশক্তির বোঝা বইতে হয় তা থেকে দল মুক্তি পাবে। সেটা আখেরে আওয়ামী লীগ ও তার সরকারকেই লাভবান করবে।
এবারে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে সুকৌশলে শামীম ওসমানকে দমানো হয়েছে। নির্বাচনের আগেপড়ে তিনি অনেক বাগাড়ম্বর ও নাটকীয় চমকের আশ্রয় নিলেও বস্তুত তাকে সম্পূর্ণ উপক্ষো করেই নারায়ণগঞ্জ মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিশাল বিজয় অর্জন করেছেন। এটা নারায়ণঞ্জের ভবিষ্যত রাজনীতির জন্যে একটি নাটকীয় পরিবর্তনের বারতা দিচ্ছে বলেই মনে হয়।
এ নির্বাচন থেকে জাতীয় নির্বাচনের জন্যেও কিছু বারতা তো পাওয়া গেল। নির্বাচনে বিজয়ী হতে টাকা কিছু লাগলেও পেশিশক্তির প্রয়োজন নেই। সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হতে পারে, সাথে প্রয়োজন দলীয় কোন্দল ও স্থানীয় স্বার্থের বিরোধগুলোকে কাটিয়ে ওঠার মত পরিকল্পনা, সর্বোপরি সত্য হল যোগ্য ও সৎ প্রার্থীই বিজয়ী হন।
এই বারতা বিএনপি আওয়ামী লীগ উভয় দলের জন্যেই এসেছে। উভয় দল মিলে যেভাবে গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থার অবক্ষয় ঘটিয়েছিল এখন তা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ এসেছে, সময় তৈরি হয়েছে। এভাবেই তো একটা দেশ এগিয়ে যায়।
বর্তমান বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। আশার কথা রাষ্ট্রপতি বড় দুই দলের আস্থায় আছেন এবং আমরা আশা করি তিনি সে আস্থার ভালো প্রতিদান উভয় দলকেই দেবেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়া অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের সাহস অর্জন করেছে - এটাই আজ বড় কথা। তবে তা পূর্ণতা পাবে যদি এই  সাহস দেশকে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন থেকে একটি স্বাধীন মর্যাদাপূর্ণ নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পারে। তার পরীক্ষা যদি নারায়ণগঞ্জে হয়ে থাকে, তাহলে তাতে সরকার ও কমিশনকে সকলেই পাশ মার্ক দেবেন। ইতোমধ্যে পর্যবেক্ষকরা সকলেই তা দিয়েছেন ,দিচ্ছেন।
শেষে দুটি কথা বলতে হয়। প্রথমত, রাজনীতি সৎ লোকের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এবারে জোরদার করা হোক। দ্বিতীয়ত, দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে হলে দেশের  অপর বড় দল বিএনপিকে তাদের প্রশ্নবিদ্ধ রাজনীতি নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে স্থায়ীভাবে বিতাড়ন করতে চাইলে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অংশীদার বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলকেও যে কোনো রকম প্রশ্নবিদ্ধ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আশা করি এই পরাজয়ের জন্যে গৎবাঁধা সমালোচনার পথে না হেঁটে বিএনপি তাদের জন্যে সৃষ্ট নতুন চ্যালেঞ্জগুলো বুঝে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।

***

Thursday, December 15, 2016

আইনের আশ্রয়ে নয় সঠিক লক্ষ্যাদর্শেই শিক্ষার মুক্তি

আবুল মোমেন

সরকার কোচিং-টিউশনি এবং নোটবইয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থেকে পিছু হটে এলো। শিক্ষামন্ত্রী এ নিয়ে প্রায় জেহাদে নেমেছিলেন, কিন্তু বাস্তবতা, বা তারও চেয়ে বেশি, নোটবই ও কোচিং ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে, নমনীয় হতে বাধ্য হলেন।  বর্তমানে সংশোধিত যে খসড়া আইনটি মন্ত্রীপরিষদে গেছে তার যেটুকু পত্রিকায় পড়েছি (প্রথম আলো, ৭ নভেম্বর ২০১৬) তাতে বোঝা গেল এ আইনের আওতায় কোচিং, টিউশনি, নোটবই সবই বহাল থাকবে। অর্থাৎ কঠোর আইন করে এবং জেহাদ ঘোষণা করেও এগুলো বন্ধ করা যায় নি। যেসব কারণে আইন ও প্রচারণা সত্ত্বেও এসব বন্ধ করা যায় নি তা বিবেচনায় নিয়েই ব্যবস্থা নিলে ভালো হত।
সাধারণভাবে এ প্রশ্ন ওঠাই স্বাভবিক যে, একজন ছাত্রকে কেন তার পাঠের বিষয়গুলো বুঝতে পাঠ্যবই, শ্রেণিকক্ষের পাঠ ও বিদ্যায়তনের শিক্ষকের সহযোগিতার বাইরে আরও বাড়তি সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হবে? এটা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমাদের দেশে স্কুল-শিক্ষা প্রবর্তনের আদিকাল থেকেই গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা ছিল। রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলা বইতে তাঁর সেজদা ছাড়াও এন্তার গৃহশিক্ষকের বর্ণনা দিয়েছেন। গল্প-উপন্যাসেও আমরা গৃহশিক্ষকদের কথা পাই। এঁরা সাধারণত  গ্রাম থেকে শহরে উচ্চ শিক্ষার জন্যে এসে সম্পন্ন গৃহস্থবাড়িতে থেকে সে বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়ানোর বিনিময়ে থাকা-খাওয়ার সংস্থান করতেন ও নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যেতেন যা জায়গির নামে পরিচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীতে হিন্দুসমাজে আর বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে মুসলিমসমাজে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রশ্ন তোলা যায়, গৃহশিক্ষকের প্রয়োজন হত কেন? শুরুতে সমস্যাটা ছিল এ ধরনের আনুষ্ঠানিক অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ পরিচয়ের অভাব। ফলে উচ্চতর শ্রেণির ছাত্ররা একাজে সহায়ক হতো, এবং বিনিময়ে তাদেরও আবাসন ও আহার্যের সংস্থান হত। তাছাড়া বিংশশতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত শহরে খুব সীমিত সংখ্যক পরিবারের বসবাস ছিল, কর্তারা মেসে বাস করে জীবিকা নির্বাহে অথবা জীবন উপভোগে সময় ব্যয় করতেন। তাই গ্রাম থেকে এনে সন্তানকে কোনো গৃহস্থ বাড়িতে থাকতে দিতেন। গ্রামীণ পরিবারে বহুকাল ধরেই স্কুলগামী শিশুরা ছিল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম প্রজন্ম। বাবা-মা তাদের দেখভালে অক্ষম ছিলেন এবং উপযুক্ত কাউকে, প্রায়ই নবীন কোনো শিক্ষককে, বাড়িতে থাকতে দিয়ে বা টাকার বিনিময়ে গৃহশিক্ষক হিসেবে রাখতেন।
গৃহশিক্ষকতা ব্যক্তির জন্যে সাময়িক পেশা হলেও এরকম কর্মপ্রার্থীর নিত্য চাহিদা ও জোগান থাকায় এর একটা ধারাবাহিকতা এ সমাজে বরাবর ছিল। বলা যায় এ পেশা আমাদের সামাজিক সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে যুক্ত।
বিষয়টা আমাদের দেশের ক্ষেত্রে জটিল এবং বিশিষ্ট হয়ে উঠল এ কারণে যে আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দুশত বছর অতিক্রান্ত হলেও আমাদের সমাজ শিক্ষা বা লেখাপড়া বা পঠনপাঠন কিংবা জ্ঞানার্জনকে এর - অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও এতদ্সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি, সনদপত্র ইত্যাদির - বাইরে জীবনের সাথে যুক্ত বা জীবনে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে নি। শিক্ষা এক জীবনবিযুক্ত প্রক্রিয়া, এর একমাত্র লক্ষ্য ও মোক্ষ হল ডিগ্রি ও সনদপত্র, জীবনকে তাৎপর্যময়, আনন্দময় করে তোলার রসদও যে এখান থেকেই আসবে; এখান থেকেই মানুষটার ভাবনার জগৎ, বিবেচনার বোধ ও ক্ষমতা, ধৈর্য, মমতা, সহিষ্ণুতা, ঔদার্য, সহানুভূতি, সেবাপরায়নতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী অর্জিত হবে তার ভাবনা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে আর নেই। একসময় শিক্ষা মহৎ আদর্শ লালন করত, শিক্ষকরা সে আদর্শের প্রতিভূ ছিলেন। এখন তাকে আমরা বেশিরকম বৈষয়িক বিবেচনায় বেঁধে ফেললাম।
এদিকে ছাত্রত্ব শেষ করার পর কাউকে তো আর বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা দিতে হয় না, কিন্তু জীবনে পদে পদে বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, মানবিকতাসহ বিভিন্ন দক্ষতা ও মূল্যবোধের পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়। সেসব পরীক্ষায় যে আমরা ভালো করছি না তা সমাজের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এর দায় শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা এড়াতে পারে না।
পরীক্ষা, পাঠ্যবই ও সিলেবাস এবং জিপিএ-৫ কেন্দ্রিক যে শিক্ষা তাতে কারো শিক্ষার্থী সত্তার কোনো গুরুত্ব নেই, সমস্ত জোরটা গিয়ে পড়ে পরীক্ষার্থী হিসেবে তার দক্ষতার ওপর। স্কুল (এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) পরীক্ষা ও পাঠ্যবইয়ের বাইরেও আরো নানা বিষয়ে ছাত্রকে অবহিত, আগ্রহী ও দক্ষ করে তোলার কথা। সেখানে সে খেলবে, মিশবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি করবে, এবং স্কাউট-গাইড করবে, দেশ এবং  বিদেশের কথাও জানবে, কোনো কাজে যুক্ত হবে ইত্যাদি।
কিন্তু কী এক জাতিগত তাড়নায় সকলেই বুঝেছেন যে, শিক্ষার লক্ষ্য হল পরীক্ষায় ভালো ফল করা, ক্রমে তা-ই একমাত্র লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে! সেদিক থেকে স্কুলকে টেক্কা দিয়ে পরীক্ষার ফলার্জনের আর্থিক বাজারটি দখলে নিয়েছে কোচিং সেন্টার। স্কুল শিক্ষকরা স্কুলে মনোযোগ না দিয়ে ব্যাচ পড়ানোর দিকে মন দিয়ে শিক্ষাবাজার থেকে মুনাফা নিচ্ছেন। আর জায়গির ও গৃহশিক্ষকতা যাদের গতি হত তারা দল বেঁধে কোচিং সেন্টার দিয়ে শিক্ষাবাজারের সবচেয়ে সফল বণিকে পরিণত হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা কেবল পরীক্ষা দেয়, ওরা বলে মডেল টেস্ট। এভাবে ছাত্ররা দক্ষ দুরন্ত পরীক্ষার্থীতে রূপান্তরিত হয়।
এভাবে তারা ভালো ফলও করে, কিন্তু বিনিময়ে অর্থ ছাড়াও আরো মূল্য দেয়, তাহল তার পড়াশুনার ইচ্ছা, জ্ঞানার্জনের আগ্রহ, সেটা আদতে অংকুরেই ঝরে যায়, অবিকশিত থেকে যায়। সে সংবাদপত্র বা প্রচারপত্র ছাড়া আর কিছুই পড়তে পারে না। বই-পুস্তক পাঠে মনোযোগও দিতে পারে না, আনন্দও পায় না। আমরা এভাবে পাঠ্যবইয়ের বাছাই করা অংশের (কেননা দক্ষ কোচ নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকুর প্রশ্নের উত্তর শেখান) ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে শিক্ষিত জাতি গঠন করছি! আখেরে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চকচকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও অধূনা তরুণরা না পারে শুদ্ধ বাংলা শুদ্ধ ইংরেজি লিখতে, না পারে জাতির শ্রেষ্ঠ কৃতি সম্পর্কে বলতে কিংবা পারে না বিখ্যাত মনীষীদের কথা বা জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে ।
আমাদেরই ব্যবস্থার কারণে ছাত্র-অভিভাবক উভয়ের কাছেই স্কুলের চেয়ে কোচিং সেন্টারের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। যেসব স্কুল ভালো ফল করছে খোঁজ নিলে দেখা যাবে তারাও কোচিং-এর অনুকরণে সাপ্তাহিক, মাসিক, বিষয়ভিত্তিক, অধ্যায়ভিত্তিক হরেক পরীক্ষার জালে ছাত্রদের বেঁধে রেখেছে। আইন দিয়ে এ ফলের লোভ আর পরীক্ষার মড়ক ঠেকানো যাবে না এবং এদের জ্বালানি নোটবইও বন্ধ হবে না। যদি শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য হয় পরীক্ষা তাহলে কেবল যে শিক্ষার উদ্দেশ্য খণ্ডিত সীমিত হয়ে পড়ল তা নয়, এই সংকীর্ণ কিন্তু লোভনীয় উদ্দেশ্যকে ঘিরে বাণিজ্য তৈরি হওয়া স্বাভাবিক, তৈরি করা সহজ। যদি ছাত্রের অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক গুণাবলী-দক্ষতা অর্জনের দায়ও শিক্ষার ওপর থাকত তবে কোচিং সেন্টার বা গৃহশিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টেক্কা দিতে পারত না।
আমি যে বিষয়টি এখানে বলতে চাইছি তা কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবেচ্য নয়, এটি হল জাতি গঠনের প্রশ্ন। আমরা কি পরীক্ষা পাশের সংকীর্ণ মাপকাঠির ভিত্তিতেই জাতিগঠন করব নাকি আরও ব্যাপ্ত পরিসরে মানুষকে বিবেচনায় নেব সেটি আগে ঠিক করতে হবে। পরীক্ষা পাশই যদি মাপকাঠি হয় তবে কোচিং-নোট বই ব্যবসা কখনো বন্ধ করা যাবে না। এটি জাতির জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
আমরা কি লক্ষ্য করছি শিশুরা পালে পালে যেসব কোচিং সেন্টারে ছুটছে সেগুলো একজাতের কারাগার, স্কুলগুলো হল বন্দিশালা আর বাড়িগুলো বহুতল ভবনে খাঁচার মত ঝুলে থাকে। আর মাঠ, অবসর, বন্ধুবান্ধব, যোগ্য নেতা, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা ছাড়া শিশুরা কেবল পরীক্ষার ঘানি টানছে। শৈশবের জন্যে বড়দের কাছ থেকে একটু মায়া একটু সহানুভূতি দরকার, ভাবনা দরকার, পরিকল্পনা চাই। সেটা দিতে আমরা বড় কার্পণ্য করছি। সোনার ডিম পাড়ার জন্যে তৈরি হওয়ার আগেই হাঁসগুলোকে বন্ধ্যা করে দিচ্ছি।
প্রত্যেকের বাড়ির পরিবেশ ঠিক করা রাষ্ট্রের কাজ নয়, কিন্তু স্কুলের ভূমিকা ঠিক করা সম্ভব। তবে তার আগে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে। জাতিগতভাবে আমাদের বুঝতে হবে যে পাঠ্যবইয়ের বাছাই অংশের নোট পড়ে শিক্ষিত জাতি গঠন এবং যথার্থ মানুষ তৈরি করা সম্ভব নয়। বরং এই খণ্ডিত বিকৃত শিক্ষার বাইরে থেকে হয়ত মানুষ হওয়া সম্ভব।

মূল জায়গাটা ঠিক করে স্কুলকে সেভাবে গড়ে তুললে আপনিই মানুষ কোচিং-নোট বইয়ের পিছনে কড়ি ঢালবে না, শ্রম দেবে না। আর তারপরে শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যটা শিশুদের জন্যে আরও সৃজনশীল সব উপকরণ ও কাজের চ্যালেঞ্জ ভিত্তিক হয়ে উঠবে, তাতে মেধাবীরা অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারবে। জাতি ও শিক্ষার নাভিশ্বাস থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।

***

Saturday, December 10, 2016

গা ভাসিয়ে নাকি গা লাগিয়ে পাব রোকেয়াকে?

আবুল মোমেন


বাংলাদেশে বেগম রোকেয়ার ভাবমূর্তি এখন উজ্জ্বল। হয়ত বলা যায় বাঙালি মুসলিম সমাজের তিনিই শীর্ষ নারী ব্যক্তিত্ব। তাঁর নামে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রিনিবাস হয়েছে, রাজধানীতে সড়কের নামকরণ হয়েছে তাঁর নামে। জনজীবনে বেগম রোকেয়া এভাবে প্রতিষ্ঠিত আজ।
বেগম রোকেয়ার সাহিত্যের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আছে নারীর অবরোধমুক্তি। পর্দাপ্রথার আতিশয্যকে তিনি কষাঘাত করেছেন সাহিত্যে - বিশেষত অবরোধবাসিনীর পত্রে। দ্বিতীয় বিষয় ছিল ধর্মের নামে নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার ক্ষুণ্ন করার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ।
তবে বাংলাদেশে তাঁর জীবনের মূল ব্রত নারী শিক্ষার প্রসার আজ ঘটে চলেছে - এই ভেবে আত্মপ্রসাদ পাওয়া যেতে পারে। তবে এটি ঘটছে যুগের নিয়মে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের সাথে তাল মিলিয়ে। কিন্তু এ প্রশ্নটা না ভুললেই নয় - নারী, এবং ছেলেরাও, বর্তমান বাংলাদেশে যে শিক্ষা পাচ্ছে এবং শিক্ষা পেয়ে যেভাবে বড় হচ্ছে বেগম রোকেয়া কি তার কথাই ভেবেছিলেন?
আজ বাংলাদেশের সমাজমৃত্তিকায় জঙ্গিবাদ বীজ বপন করেছে, ধর্মান্ধতা শক্তিশালী হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িকতা বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। রোকেয়া এসবের বিরুদ্ধেই লিখেছেন, বলেছেন এবং কাজ করে গেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে স্বামীর কাছ থেকে প্রেরণা ও সহযোগিতা উভয়ই পেয়েছিলেন। সম্ভবত তাই নারী-পুরুষের সমতা ও অংশগ্রহণে সমাজের কল্যাণ তিনি দেখেছেন।
বাংলাদেশ নানামুখী পথে চলছে। তবে মুসলিম সমাজের বড় একটি অংশ নারীকে অবরোধবাসিনীই দেখতে চাইছে। যদিও একদিক থেকে প্রায় রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্নের রাজ্যের মতই আজকের বাংলাদেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিরোধী নেত্রী, সংসদের বিরোধী নেত্রী, সংসদের উপনেতা, স্পিকার, বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উচ্চ আদালতের একাধিক বিচারপতি মহিলা তবুও আমরা জানি এটি রোকেয়া কল্পিত ও কথিত নারীস্তান নয়। রীতিমত পুরুষস্তান। রোকেয়া পুরুষতন্ত্রকে সমালোচনার হুল ফোটানোর জন্যেই এক নারীস্তানের কল্পলোক সৃষ্টি করেছিলেন - অবরুদ্ধ নারীর আর্তনাদ ও ফরিয়াদ যেন তাঁর  জোরালো লেখায় অন্যভাবে প্রকাশ পেয়েছিল।
আজ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে এত এত নারী, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়েদের প্রাধান্য সত্ত্বেও বলতে হবে, সাধারণের সমাজে নারীর অবস্থান রোকেয়ার ভাবনাকে উপহাসই করছে। নারী নির্যাতন বাড়ছেই কেবল। নারীর নিরাপত্তা আজ সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে।
তাঁর স্বপ্নের পথ থেকে অপসৃয়মান এ সমাজে তবুও রোকেয়া স্মরণীয় ব্যক্তি, শ্রদ্ধেয় নাম, ইতিহাসের বরেণ্য চরিত্র। ব্যস এটুকুই। অর্থাৎ বাহ্য স্বীকৃতি দিয়েই আমরা খালাস। সমাজবাস্তবতা তো তাই বলে। তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করছি না আমরা, তাঁর লক্ষ্য ও আদর্শ বাস্তবায়নে আমরা অপারগ।
রোকেয়ার সৃষ্ট সাহিত্য পাঠেই তাঁকে পাওয়া যাবে, রোকেয়ার জীবনেই মিলবে তাঁর জীবনাদর্শের শিক্ষা। কিন্তু এ সমাজে একালে যেন নাম নেওয়াই যথেষ্ট, আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপনেই দায়িত্ব শেষ হয়।
বেগম রোকেয়ার ভাবমূর্তি নতুন প্রজন্মের কাছে - যারা তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে, ছাত্রী নিবাসে থাকে - কীভাবে পৌঁছায়, নির্মিত হয়? হয় কি? এ সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। যেটুকু ধারণা হয় তা হবে রোকেয়াকে লজ্জা দেওয়ার সামিল।
রোকেয়ার নি:স্বীকরণের মাধ্যমে এক নামসর্বস্ব রোকেয়াকে তৈরি করে নেওয়া হল কি? নামসর্বস্ব রোকেয়ার নামে জয়ধ্বনি দেওয়া সহজ। তাঁর বইয়ের পাতা খুললে, তা পড়লে, চিন্তার সাথে পরিচিত হলেই বিপদ। তাহলে নিশ্চিন্তে গা ভাসানো যাবে না। আমরা কি গা ভাসিয়েই চলব নাকি রোকেয়ার তুল্য না হলেও তাঁর অনুসারী হয়ে গা লাগিয়ে কাজ করে তাঁর ঋণ স্বীকার ও শোধ করব।


***