Friday, March 21, 2014

নির্বাচন নয়, স্থিতিশীলতার জন্য রাষ্ট্রদর্শনে ঐকমত্যই জরুরি

আবুল মোমেন
অনেকেই আজকাল বলছেন, একটি অংশগ্রহণমূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে। এ কথা সবাই জানি, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে একটি প্রধান অন্তরায় হল স্থিতিশীলতার অভাব। মোটামুটি স্বাধীনতার পর থেকেই শাসনব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা, দুর্নীতি এবং বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দলের তত্পরতা মিলে দেশটি কখনও শান্তিতে শাসন করা সম্ভব হয়নি। পরে জেনারেল জিয়া দেশের যাত্রাপথই ঘুরিয়ে দিলেন। স্থিতিশীলতাও থেকে গেছে অধরা।
বাংলাদেশের ’৯১-পরবর্তী গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায়ও অস্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতাই অব্যাহত থেকেছে। অথচ এ সময় নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অন্তত চারটি শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে তাতেও স্থিতিশীলতা আসেনি। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে গৌরব করতে পারি, কিন্তু দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন, জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রকাঠামো, জবাবদিহিমূলক স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সেই বহু কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ স্থিতিশীলতার লক্ষ্য কি পূরণ হয়েছিল? হয়নি।
এটা মানতেই হবে স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশ এগোতে পারবে না। এ বিষয়ে যদি চিন্তাবিদরা সঠিক পথের দিশা দিতে না পারেন তবে স্থিতিশীলতা সোনার হরিণ হয়ে অধরাই থেকে যাবে। আমার ধারণা শাসনব্যবস্থা বা সরকারপদ্ধতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও রাষ্ট্রের ঐক্য ও স্থিতির মূল অবলম্বন হচ্ছে তার দর্শন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদর্শন কী তা তার জন্মকাহিনিতেই বর্ণিত আছে। কারণ তা ইতিহাসের যাত্রাপথে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত এবং জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ছিল সঙ্গতিপূর্ণ। বিপরীতে জন্ম থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি যে সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খেয়ে স্বাধীনতার প্রায় সত্তর বছর পরও অস্থিতিশীল হয়ে আছে তার মূল কারণ তারা সঠিক রাষ্ট্রদর্শনের সন্ধান পায়নি। যে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রদর্শন তারা তৈরি করতে চেয়েছে তা স্বাভাবিক ও ধারাবাহিকতায় সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না, এটি ছিল আরোপিত। তাই সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা এড়ানো যায়নি, যাচ্ছে না।
এ দেশের জনগণ এই আরোপিত কৃত্রিম রাষ্ট্রদর্শনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, আন্দোলন চালিয়েছে, সংগ্রাম গড়ে তুলেছে এবং অবশেষে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে। প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ সংগ্রামে জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর প্রকাশ ঘটেছে এবং এসব বিষয়ে একটি ঐকমত্যও তৈরি হয়েছিল। এখানেই নিহিত আছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদর্শন।
কী সেই রাষ্ট্রদর্শন? বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতিতে সেটি যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশটি হবে সব ধর্মের মানুষের আবাসভূমি, বাঙালির যে ভাষা-সংস্কৃতির গৌরবময় মানবতাবাদী ঐতিহ্য তাকে লালন করবে, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ঘুচিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা বহাল থাকবে।
সেই জাতি তার রাষ্ট্রদর্শনকে শক্তিশালী করে এগিয়ে নিতে পারে, যারা তাদের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়গুলোকে শনাক্ত ও তার মর্যাদা লালন করে এবং ইতিহাসের কীর্তিমান নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাংলাদেশে জাতির ঐক্য ও সংহতির এই উত্স ও ক্ষেত্রগুলো অস্বীকার করার, এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির, এমনকী নতুন প্রজন্মকে এক বিস্মৃতির গহ্বরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সবাই জানি এই প্রয়াস রাষ্ট্রীয়ভাবে, রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ প্রয়াসে শুরু করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি এ কাজে নির্ভর করলেন স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি ও দলের ওপর। যারা ছিল পরাজিত শক্তি, জাতি ও রাষ্ট্রের কাছে অপরাধী, অনেকেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি, পলাতক, লোকসমাজের আড়ালে তিনি তাদের খুঁজে নিলেন, বৈধতা দিলেন, শক্তি জোগালেন এবং রাষ্ট্রীয় কাজে যুক্ত করলেন। এভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রদর্শনের সংকটের সূচনা হয়েছে। এরপর থেকে অস্থিতিশীলতা আমাদের পিছু ছাড়েনি।
পাকিস্তানসহ একই সময়ে ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল উপমহাদেশের তিনটি দেশ। অপর দুটি দেশ হল ভারত ও শ্রীলংকা। দুটি দেশই দারিদ্র্যসহ নানা সমস্যার ভেতর দিয়ে গেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদের সংকট, এমনকী সশস্ত্র যুদ্ধ দুুদেশই সামলেছে। দুুদেশেই মার্কসবাদী-মাওবাদীদের বিপ্লবী তত্পরতাও চলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শাসনকর্মে স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়নি, দেশগুলো এগিয়ে গেছে। এর কারণ ইতিহাস ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে জাতির মূল স্রোতে বিভক্তি, বিভেদ চর্চা হয়নি। সংকটের সময় তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমাদের কাছে ভারত অনেক পরিচিত, তাই সেখানকার দৃষ্টান্ত সবার বুঝে নিতে সুবিধা হবে। ভারতবর্ষের যে-কোনও ধর্মাবলম্বী মানুষ— হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, প্রকৃতি পূজারি ইত্যাদি সবাই ভারতীয়ত্বের গর্বে একইভাবে অনুপ্রাণিত বোধ করেন। পাঞ্জাবি, বাঙালি, তামিল, বিহারি, উড়িয়া, অহোম বিচিত্র এসব জাতির সবারই মধ্যে এই ভারতীয়ত্ব আমরা দেখি। চীন-ভারত এবং পাক-ভারত যুদ্ধ বা অন্য যে-কোনও সংকটে তারা দলীয় বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছে। রাষ্ট্রের তথা সরকারের দুর্বল মুহূর্তে তাকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে না। সবাই এক হয়ে কাজ করে।
এই যে ভারতীয়ত্বের গৌরববোধ এটা আসে অতীত ঐতিহ্য ও ইতিহাস থেকে। তাদের ইতিহাসের নিদর্শন, যেমন মুসলিম স্থাপত্য তাজমহল, হিন্দু স্থাপত্য কোনার্কের মন্দির কিংবা বৌদ্ধ স্থাপনা সারনাথ প্রভৃতিকে ধর্মনির্বিশেষে তারা মর্যাদা দেয়। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে হিন্দু চন্দ্রগুপ্ত, বৌদ্ধ অশোক বা মুসলিম আকবরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং এদের জীবন ও কর্মের চর্চায় কোনও বিভাজন করে না। স্বাধীনতার ইতিহাসের নায়ক হিসেবে গান্ধি-নেহরুর সঙ্গে মৌলানা আজাদ-গাফফার খানরাও মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। মহাত্মা গান্ধির লবণ সত্যাগ্রহ যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তো মাস্টারদা সূর্যসেনের চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের গুরুত্বকেও খাটো করা হয় না। এভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পারম্পর্য ও ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়।
উল্টোদিকে পাকিস্তান চালিয়েছিল সাম্প্রদায়িক নীতি। বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতিসহ রাজনৈতিক অধিকারের যে-কোনও আন্দোলনকেই তারা ষড়যন্ত্র হিসেবে গণ্য করেছে, আন্দোলনকারীদের ভারতপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে এবং নানাভাবে দাবিয়ে রেখে শোষণ চালিয়ে যাওয়াই ছিল তাদের কৌশল। সেদিন কেন আমরা এই শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে গেছি, কেন আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি? প্রথমত, আমাদের রাষ্ট্রদর্শনের সঙ্গে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদর্শনের মিল হয়নি। তাদের রাষ্ট্রদর্শন মেনে নিলে বাঙালি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব থাকত না, আমাদের বিকাশ ঘটত না। দ্বিতীয়ত, কেন আমরা শত নির্যাতন সত্ত্বেও এসব আন্দোলনে সফল হয়েছি, কেনই বা মুক্তিযুদ্ধে এত ত্যাগ স্বীকার করে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে বিজয়ী হতে পেরেছি? কারণ একটি রাষ্ট্রদর্শনে সেদিন আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিলাম। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ এর বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল মাত্র। এই সংগ্রামের পুরোধা এবং ঐক্যের কারিগর ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা, রাষ্ট্রের স্থপতি। তার স্থান সবার চেয়ে আলাদা, স্বতন্ত্র, সবার ঊর্ধ্বে।
কিন্তু তাকে হত্যা করার পর থেকে জেনারেল জিয়া এ জাতিকে ইতিহাস বিকৃতির পথে টানতে চেয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদর্শন অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করেছেন। এ দেশের মানুষ তা মানেনি। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু টানা দীর্ঘ কুড়ি বছর এ ধারায় দেশ শাসিত হওয়ায় গণমাধ্যমে তারই প্রতিফলন ঘটেছে এবং এতে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে দেশের। এ দুই দশকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, দুটি প্রজন্ম এ সম্পর্কে অনবহিত থেকে বড় হয়েছে। ফলে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে। তারই খেসারত দিয়ে চলেছি আমরা।
এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসমাপ্ত রেখে কেবল অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করে দেশে স্থিতিশীলতা আনা যাবে না। তা যে যায় না তা তো আমরা ভুক্তভোগী জাতি হিসেবে ভালোভাবেই জানি। গত ২৪ বছরে চারটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করেও স্থিতিশীলতা পাইনি, কার্যকর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পাইনি। কীভাবে এই স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে? যদি আমরা এ কাজে সফল দেশের দৃষ্টান্ত টানি তাহলে দেখব নির্বাচন নয়, স্থিতিশীল সরকারই এ ফল এনে দিয়েছে। চারটি দেশের দৃষ্টান্ত আমরা অহরহ টানি, যেমন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড। তাদের রূপান্তরের কারিগররা হলেন মাহাথির মোহাম্মদ, লি কিউ ইয়ান, পার্ক চুংহি এবং নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের সামরিক শাসকরা। এরা সবাই কর্তৃত্বপরায়ণ শাসক ছিলেন, নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের মাধ্যমে চরম বিপক্ষ মতকে দমিয়ে রেখেছিলেন। আর ভারতবর্ষের ইতিহাসে দেখি সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্যেই আধুনিক ভারতের রূপকার জওহরলাল নেহরু আমৃত্যু টানা সুদীর্ঘ ১৭ বছর দেশ শাসন করেছেন। এ সময়ে তিনি দেশের শিল্পায়নের ভিত্তি তৈরি করে দেন। এর পরও কংগ্রেস দলই দেশ শাসন করে, একটি দল টানা ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল। এ রকম দীর্ঘ  শাসনের দৃষ্টান্ত আরও দেওয়া যাবে। গণতন্ত্রেই নিকট-অতীতে ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচার ও টনি ব্লেয়ার প্রত্যেকে টানা ১২ বছর করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে একজন রাষ্ট্রপতি পর-পর দুবারের বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। ইতিহাসে দেখা যায় অল্প কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া সব রাষ্ট্রপতিই দুই মেয়াদে ৮ বছর করে দেশ শাসন করে গেছেন। বর্তমানে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল সম্প্রতি তৃতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
একটি পরিণত জাতি স্থিতিশীলতা তথা উন্নয়নের জন্য যেমন ত্যাগ স্বীকার করে তেমনি ধৈর্যও ধরে। আমাদের ইতিহাসের পরীক্ষিত দৃষ্টান্তগুলো থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ হলে দুর্নীতি কমানো, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সুশাসনের পথে এগোনো সম্ভব হবে। কিন্তু কোনও অবস্থায়ই দেশের রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে ছেলে খেলা করতে দেওয়া যাবে না। কারণ তাতে জাতি তার গৌরবের অধ্যায়, অক্ষয় কীর্তি, ইতিহাসের নায়কদের সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। দেশের মানুষ যদি ভাষা আন্দোলন, গণ-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্ববোধ না করে, যদি ভাষাশহীদ ও ভাষাসৈনিক, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়; যদি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাঙালির শিল্প ও সংস্কৃতি, বাঙালির রাজনৈতিক কীর্তি সম্পর্কে গৌরববোধ না জন্মায়; যদি রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জসীমউদ্দীনসহ সাহিত্যশিল্পী, লালন-আব্বাসউদ্দিন, জয়নুলসহ শিল্পীবৃন্দ, যদি শেরেবাংলা-বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে শ্রদ্ধা না থাকে তাহলে কীভাবে রাষ্ট্রদর্শন তৈরি হবে? কীভাবেই বা জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে?
আমাদের রূপান্তর ও উত্তরণের কাণ্ডারি কে হবেন? কোন রাজনৈতিক শক্তিকে আমরা দীর্ঘমেয়াদে দেশ শাসনের জন্য, জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেব সে বিষয়টি ঠিক করতে হবে। দ্বিপক্ষীয় তর্ক চালিয়ে গেলে কেবল বিভ্রান্তি ছড়াবে, তর্কের খাতিরে তর্কই চলবে, যা আজকের টকশো-মহামারীতে ঘটছে। আমাদের গভীর চিন্তা, যুক্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি প্রজ্ঞাবান সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমার মনে হয় ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে, এ ব্যাপারে আর দেরি করা ঠিক হবে না।