Tuesday, January 27, 2015

বেগম জিয়া কি পারবেন ক্রান্তিকালের নেতৃত্ব দিতে?

আবুল মোমেন

মানুষ এখন সত্যিই ধাঁধাঁয় পড়েছে - কাকে দায়ি করবে? দুই বড় দল একে অপরকে দায়ি করছে। জনগণ বিভক্ত। নানা স্তরে যেসব মতামত প্রকাশিত হচ্ছে তাতেও এই বিভক্ত মতামতই প্রকাশ পাচ্ছে।
তবে একটা বিষয়ে জনমত এক। নিরীহ মানুষের জানমালের ওপর এই আঘাত কেউই মানতে পারছে না। এটা অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং কোনোভাবেই রাজনীতি নামে আখ্যায়িত হতে পারে না। অবরোধ, হরতাল ইত্যাদি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হাত থেকে ভাড়াটে খুনি ও অপরাধীদের হাতে চলে যাচ্ছে। তাই এটি রাজনীতি নয়।  আর এতে বর্তমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রথম পর্যায়ে বিএনপি জনগণের সহানুভূতি পেলেও ধীরে ধীরে জনমত তাদের বিরুদ্ধেই চলে যাচ্ছে।
সরকার যেভাবে দমনপীড়ন চালিয়ে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি বানচাল করে দিচ্ছে তাতে জনগণের সায় ছিল না। সম্ভবত এখনও নেই। কিন্তু এই অবস্থায় সরকারকে মোকাবিলার জন্যে সরাসরি মানুষের ওপর আঘাত করার কৌশল বিএনপির জন্যে লাভজনক হচ্ছে না। বরং এতে রাজনৈতিকভাবে তাদের অবক্ষয় ঘটছে। তাদের রাজনীতি প্রায় জামায়াতের সাথে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এতে বিএনপির ক্ষতি, গণতন্ত্রেরও ক্ষতি। বিএনপি কেবলমাত্র নতুন নির্বাচন ছাড়া এযাবৎ আর কোনো ইস্যু সামনে আনতে পারে নি। কিন্তু বাস্তবে মানুষ নির্বাচনের ওপরও আস্থা হারিয়েছে। এদেশে নব্বই-পরবর্তী সময়েই অন্তত চারবার সকল দলের অংশগ্রহণে কারচুপিমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এ ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ দুই বড় দলকেই ক্ষমতায় পাঠিয়েছিল একাধিকবার। কিন্তু তাতে কি দেশে শান্তি ছিল? মানুষ কি স্বস্তিতে জীবন কাটাতে পেরেছিল? না পারে নি। যেবার যেদল পরাজিত হয়েছে তারা অশান্তি, সংঘাত ও হানাহানির পথ ধরেছিল। ফলে নির্বাচন, সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনও, তো শান্তি ও স্বস্তির গ্যারান্টি দেয় না। এর ফলে নির্বাচনের দাবির আর কোনো জনগ্রহণযোগ্যতা থাকল না। এ পরিণতির জন্যে মানুষ নিশ্চয় দুই বড় দলকে দায়ি করে। কিন্তু যেহেতু এতে তারা সমাধান পায় নি সংঘাত নিরসনের তাই এরকম একটি দাবিতে তারা রাজপথেও নামবে না। বিএনপি অনেক চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু জনগণ আন্দোলনে নামে নি। কী দুর্ভাগ্য আজ আন্দোলন চালাতে তাই নির্ভর করতে হচ্ছে বোমাবাজ সন্ত্রাসীদের ওপর।
বাস্তবতা উপলব্ধি করে রাজনৈতিক দলের উচিত হবে তাদের করণীয় নির্ধারণ করা। আর তা হতে হবে প্রধানত জনগণের সমস্যাভিত্তিক ইস্যু নিয়ে। ক্ষমতায় কে যাবেন, কোন বড় দল সরকার গঠন করবেন এই টানাপোড়েনের অংশীদার হবে না জনগণ। কিন্তু তাদের জীবনে সমস্যা অনেক, আর তাদের হয়ে আদায় করবার আছে অনেক দাবি। প্রকৃত রাজনৈতিক দল সেটা অনুধাবন করে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে নামতে পারে।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর হুমকি রয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা প্রায় মহামারীর রূপ নিয়েছে, র‌্যাব-পুলিশের বাড়াবাড়ি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে অবনতিশীল করে রেখেছে। ক্ষমতাসীন দলের বাড়াবাড়িও চরমে উঠেছে। শিক্ষার পণ্যায়ন বন্ধ করা দরকার, সেইসাথে পরীক্ষার জবরদস্তি থেকে ছাত্রদের মুক্ত করা প্রয়োজন। দুর্নীতির দাপট তেমন কমে নি, নারী নির্যাতনও বন্ধ হয় নি। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির নিচে আছে বাংলাদেশের বিরাট অংশ এবং সেখানে বসবাসকারী বিপুল জনগোষ্ঠী। তাদের পাশে বিরোধী রাজনৈতিক দল কই?
মানুষ আজ বড় অসহায়। অসহায় মানুষের সবচেয়ে বড় ভরসার স্থল হতে পারত রাজনৈতিক দল। বিশেষভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দল। কিন্তু তাদের ক্ষমতার লোভ এতই প্রকটভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে জনগণ তাদের ওপর আস্থা হারাতে বসেছে। এর ওপর তাদের আন্দোলনের সময় মানুষের ওপর পেট্রোল বোমার আঘাত রাজনীতির ওপর মানুষের সব আশা ভরসাই নষ্ট করে দিচ্ছে।
বিরোধী অবস্থানে চাপের মধ্যে পড়া দল হিসেবে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। এ দলের সমর্থক বিপুল, ভোটার অনেক, কিন্তু ত্যাগী নেতা-কর্মীর অভাব রয়েছে। তার জন সমর্থন বিপুল হলেও সংগঠন দুর্বল। এ অনেকটা অতীতের মুসলিম লীগের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তাদেরও নেতা ও ভোট ছিল, কিন্তু এই বঙ্গে জনগণের ভিতরে কখনও মুসলিম লীগ দল হিসেবে দানা বাঁধে নি, দৃঢ়ভিত্তি পায় নি। তাই বায়ান্নর একটি আন্দোলনের পটভূমিতে পরবর্তী নির্বাচনে পরাজয় এবং এরপরে দলের অস্তিত্বও বিলীন হয়ে গেল।
অতএব নির্বাচনী আন্দোলন আর ক্ষমতার মোহে বিভোর না হয়ে বিএনপির উচিত হবে তার স্বতন্ত্র সুস্পষ্ট রাজনীতি দাঁড় করানো এবং সেই সব রাজনৈতিক ইস্যু সামনে আনা যেগুলো বর্তমানে জনজীবনের জ্বলন্ত বিষয়। আমরা বুঝি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে থেকে এ কাজ সম্ভব নয়।
জনগণ দু:সময়ে পাশে রাজনৈতিক শক্তিকে চায়, কোনো অপশক্তিকে নয়। বিএনপির জন্যে এটা ক্রান্তিকাল - দু:সময় উত্তরণে বেগম জিয়া সঠিক নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন কিনা তার পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। তাতে জেদ, একগুঁয়েমি কিংবা বিদ্বেষ নয়, চাই প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা। সেটাই বিএনপি, জনগণ ও দেশের জন্যে মঙ্গলজনক হবে।

***


Sunday, January 4, 2015

জিহাদকাণ্ডের সূত্র ধরে

আবুল মোমেন

শিশু জিহাদ (প্রথম আলোয় ব্যবহৃত নাম) বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর বাইরেও নানান নাম পেয়েছে - জেহাদ, জিয়াদ, জিয়া ইত্যাদি। ওয়াসার যে পাইপে সে পড়েছে সেটি কত গভীর ছিল তারও বিভ্রান্তিকর নানান পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে - তাতে ২০০ ফুট থেকে ৬০০ ফুটের মত বিস্তর ফারাক ছিল। গর্ত থেকে সে কথা বলেছিল কিনা এ নিয়ে মতভিন্নতা প্রকাশ পেয়েছে। তাতে পাঠানো খাবার সে খেয়েছিল কিনা সেটাও ভিন্ন ভিন্ন ধারণার জন্ম দিয়েছে। জিহাদ আদৌ সেই গর্তে পড়েছিল কিনা তা নিয়েও রহস্য সৃষ্টি করা হয়েছিল। তবে সবাইকে টেক্কা দিয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ। তাদের মূল কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং সাধারণ মানুষকে অপরাধীদের হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়া। জিহাদের দুর্ঘটনায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় নি, কূপ ঘিরে মানুষের জটলা হলেও মারামারির মত পরিস্থিতিও হয়নি। তবে পুলিশের জন্যে অন্য যে কাজটি থাকে তাহল দুর্ঘটনার জন্যে দায়ি অপরাধীকে শনাক্ত করা। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়াসা, কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার কোম্পানি এবং ব্যক্তি হিসেবে ওয়াসার চেয়ারম্যান বা মুখ্য প্রকৌশলী কিংবা ঠিকাদারি কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই দায়ি করেছে। কিন্তু গোয়েন্দা ও পুলিশ আরও সহজ সমাধানের পথ খুঁজেছেন। তারা শিশু জিহাদের বাবাকে থানায় আটকে রেখে জেরায় জেরবার করে প্রমাণ করতে চেয়েছে দুর্ঘটনাটাই ঘটে নি। এটি জিহাদের বাবার সাজানো নাটক।
তবে ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা যে তাকে উদ্ধারের চেষ্টায় আন্তরিক ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা প্রায় বিশ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণার মিনিট পনেরর মধ্যেই সাধারণ মানুষ বুদ্ধি খাটিয়ে শিশু জিহাদকে সেই গভীর খাদ থেকে উদ্ধার করে ফায়ার ব্রিগেড কর্মীদের আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করলেও দক্ষতাকে তো করল। সেই সাথে প্রশ্নবিদ্ধ করল গোয়েন্দা ও পুলিশের আন্তরিকতা ও দক্ষতা উভয়টিকে। কারণ তারা যদি দক্ষ হতেন তাহলে বাবাকে তাঁর অজান্তে নজরদারিতে রেখে ঘটনার সমাপ্তির জন্যে অপেক্ষা করতেন। আর    আন্তরিক হলে বিপন্ন পরিবারকে সন্দেহের অপমানে বিদ্ধ না করে মানবিক সমবেদনার সাথে তাদের পাশে দাঁড়াতেন।
এই পুরো ঘটনার জন্যে পুলিশ এবং ফায়ার ব্রিগেডের উচিত হত তাদের ভুল ও ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জিহাদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সমব্যথী জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করা। এতে এই দুই সংস্থার ভাবমূর্তি হেয় হত না, কারণ ভুল সবারই হতে পারে, এ উদ্ধার অভিযানে পদে পদেই তা হয়েছে। তবুও ভুল অপরাধ নয়, মানবজীবনের একটি অনিবার্য অনুষঙ্গ। কিন্তু ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করলে মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ ও দায়িত্ববোধের পরিচয় মেলে। তাতে উভয়েরই মর্যাদা বজায় থাকে। এটা হল সভ্য সমাজের একটি মানবিক রীতি। কিন্তু আমরা যেন এতে গ্লানি ও অপমান বোধ করি। গায়ের জোরে অর্থাৎ ক্ষমতার জোরে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা চালিয়ে যাই। তাতে কাদা আরও মাখামাখি হয়, জনদৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়।
আমাদের সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো যারা চালান, এসব প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে সেবার চেয়ে কর্তৃত্বের মনোভাব প্রধান। আমলাসহ সরকারের সকল কর্মচারীরা কেতাবি ভাষায় হলেন জনসেবক, ইংরেজিতে পাব্লিক সার্ভেন্ট। সে কারণেই সচিব থেকে জেলা প্রশাসক হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সকলের জন্যেই দৈনিক কিছু সময় বরাদ্দ থাকে জনগণের ভোগান্তির কথা শোনা ও তার প্রতিকারের জন্যে। তাঁরা যে তা করেন না, বা মানুষের হিতার্থে কিছু করতে চান না তা নয়। তবুও দুদিক থেকেই সমস্যা দেখতে পাই। জনগণের দিক থেকে তৈরি হয় দুটি সমস্যা। অধিকাংশ প্রতিকারপ্রার্থী ঠিক বুঝতে পারেন না বা চান না কোন বিষয়টি নিয়ে কার কাছে যাওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, প্রতিকার পাওয়ার সরকারি পথগুলো পূরণ করে কাজটা আদায় করার ধৈর্য ও দক্ষতা তাঁদের সবসময় থাকে না। সবাই যেন চান একবারেই তাঁর জটিল ও পুরাতন সমস্যার আশু সমাধান হয়ে যাক। সেটা হয়ত বাস্তবে সম্ভব নয। কারণ প্রায়ই যেকোনো সমস্যাকে ঘিরেই একাধিক পক্ষ যুক্ত থাকেন এবং তাদের মতামত শোনা, তাদেরকে সম্মত করিয়ে সমাধান করা সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
ক্ষমতাবান জনসেবকরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, সরকারের ডানহাত-বাঁহাত। এদেশে সরকার মানেই হল সকল ক্ষমতার অধিকারী একটি প্রতিষ্ঠান। গণতান্ত্রিক আমলে তার সাথে যুক্ত হয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের প্রতাপ। সব মিলে জনসেবকরা তাঁদের জ্ঞাতসারে-অজ্ঞাতসারে হয়ে ওঠেন ক্ষমতার প্রতিভূ। তাছাড়া ঔপনিবেশিক আমলে যখন আমলাতন্ত্রের এই কাঠামোটি তৈরি হয়েছিল তখন উদ্দেশ্যটাও এরকমই ছিল। তখন থেকেই আমলারা জনসেবক হয়েও কার্যত জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন। আমরা এখনও, এত বছর পরেও, এই ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির মৌতাত কাটিয়ে উঠতে পারি নি। সত্যি বলতে কি ক্ষমতার এই একচ্ছত্র অধিকার ভুলে থাকা তাদের পক্ষে কঠিন। তাঁরা নিজেরা ভুলে গিয়ে জনগণের পাশে সেবার মনোভাব নিয়ে দাঁড়াতে চাইলেও অনেক উচ্চাভিলাষী উঠতি নেতার প্রতাপের কারণে স্বার্থের দ্বন্দ্বে তাঁদের বিপক্ষে অবস্থান নিতেও পারেন না।
একে আমলাতন্ত্রের ওপর রয়েছে ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির প্রভাব তার ওপর পাকিস্তান আমল থেকে দীর্ঘকাল অগণতান্ত্রিক শাসন চালু থাকায়, এবং চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একদলীয় ক্ষমতাভোগের প্রক্রিয়া পাকা হয়ে পড়ায় বস্তুতপক্ষে সর্বস্তরের আমলাতন্ত্রকেই সরকারের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা প্রতীক হয়ে উঠতে হয়। ফায়ার ব্রিগেড, এমনকি সরকারি হাসপাতালের মত যেসব প্রতিষ্ঠান মাঠপর্যায়ে প্রত্যক্ষভাবে জনসেবার কাজই করে থাকে তারাও জনগণের একটু ওপরে থেকেই কাজ করতে অভ্যস্ত।
কীভাবে এই দূরত্ব ঘুচানো যায়, কর্তৃত্বের মনোভাবকে সমঝোতার সমতায় নিয়ে আসা যায়? আমার মনো হয় ব্যবসায়ে যেমন আজ পিপি বা পাব্লিক-প্রাইভেট অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার কথা উঠছে তেমনি এসব ক্ষেত্রেও তাই হওয়া উচিত। প্রত্যেক থানায় পুলিশ-জনগণের একটি যৌথ কমিটি আইনশৃঙ্খলা এবং পুলিশের ভূমিকার মূল্যায়ন করবে। হাসপাতালকে নিয়ে কেবল রোগি কল্যাণ সমিতি নয়, জেলখানায় কেবল কারা পরিদর্শক সমিতি নয়, কমিটিগুলোর আওতা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সেবার দক্ষতা-ভুলত্র“টি পর্যালোচনা করে তা পরিচালনায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখা পর্যন্ত হওয়া উচিত। তাদের ভূমিকা কেবল নিষ্ক্রিয় দর্শক বা ঠুঁটো জগন্নাথ হলে এতে কোনো উপকার হবে না। আমি জানি জনগণকে এ ধরনের অধিকার দেওয়ার বিষয়ে জনসেবকদের মনে শংকা তৈরি হবে, কারণ অনেকেই এর অপব্যবহার করবেন, তাঁদের ভোগান্তিতে ফেলার চেষ্টা করবেন। কোনো একটি ব্যবস্থা চালু হলেই তার সীমাবদ্ধতা ও সমস্যাগুলো ক্রমে পরিষ্কার হয় এবং তখন সেগুলো সংশোধন করে দক্ষ ব্যবস্থাপনা চালু করা যায়। কিন্তু জনগণের অংশীদারিত্ব সম্পন্ন কোনো পদ্ধতি চালু না করে চলমান ঔপনিবেশিক ও অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতির কর্তৃত্ববাদী প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে আমরা কখনও বেরিয়ে আসতে পারব না। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন কিংবা সংসদ চালু রাখলেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি চালু হয় না। এর জন্যে প্রধানত চাই নীতি নির্ধারণ, কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশীদারিত্ব, অংশগ্রহণ। অর্থাৎ বিপথগামিতা, সীমাবদ্ধতা, এমনকি ব্যর্থতা সত্ত্বেও পদ্ধতি সচল রাখতে হবে, সঠিক ব্যবস্থা নিয়ে তা চালিয়ে যেতে হবে। পথ চলতে চলতেই আমরা এগিয়ে যেতে পারব। তাহলেই বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আকাশ থেকে অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মেঘ কাটতে শুরু করবে। আমরাও হয়ত একদিন, হয়ত অচিরেই, গণতন্ত্রের পথে মুক্তি পাব।

***