Sunday, February 8, 2015

জনগণের পাশে থাকলেই রাজনীতি লাভবান হবে

আবুল মোমেন

গতকাল একদিনেই পেট্রোল বোমায় পুড়ে মারা গেছেন ১০ জন। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। বিরোধী দলের ৩৪ দিনের আন্দোলনে পুড়ে ও গুলিতে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৬ জনে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন অগ্নিদগ্ধ আরও ৬৬ জন। রংপুর ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে আছেন ৩২ জন দগ্ধ মানুষ।
আমি অনেককেই জানি যারা টেলিভিশনে এই বীভৎস বর্বরতার করুণ পরিণতি দেখে দেখে নিজেরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা চিকিৎসকদের কাছে শুনেছি অগ্নিদগ্ধ যারা সুস্থও হচ্ছেন তাদের শারীরিক ও মানসিক পুনবার্সন এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাদের জন্যে মানসিক চিকিৎসা সেবা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা আমাদের অধিকাংশ মানুষ জানেন না। এরকম রোগীর সংখ্যাও ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।
এযাবৎ যারাই পেট্রোল বোমার শিকার হয়েছেন তারা সকলেই সমাজের নিম্নবর্গের খেটে খাওয়া মানুষ। এদের ওপর দিয়েই ‘আন্দোলনের’ মূল ঝড়টা বয়ে যাচ্ছে। এমন রাজনীতি এ দেশ আগে কখনও দেখে নি যার শিকার হবেন সাধারণ মানুষ।
দেশের অর্থনীতিও চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী এবার স্বীকার করেছেন চলতি অর্থ বছরের প্রথমার্ধ ভালো কাটলেও দ্বিতীয়ার্ধে রাজনৈতিক দুর্যোগের ফলে বিপর্যয়ে পড়েছে। সব খাতের ক্ষতি যোগ করলে গত এক মাসে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ ক্ষতির দায় ব্যাংক, বীমা, সরকার, বিনিয়োগকারীদের সাথে সাথে প্রান্তিক কৃষক ও দিনমজুরকেও বহন করতে হচ্ছে। প্রান্তিক মানুষের দিন চলছে না। পেট্রোল বোমার শিকার অনেকেই বলেছেন বাড়িতে খাবারদাবারের অভাব দেখা দেওয়ায় বাধ্য হয়ে কেউ ট্রাক নিয়ে বেরিয়েছেন, কেউবা মালবোঝাই ট্রাকে উঠেছেন, কেউ বাসের যাত্রী হয়েছেন।
অবরোধ-হরতালের নামে যা চলছে তাকে কেউ রাজনীতি বলবেন না। আবার সরকার এই কথা বলে মানুষের চরম দুর্ভোগ থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখলেও তো চলবে না। তাতে কি হতভাগ্য সাধারণ মানুষ আর দেশের নিরাপরাধ অর্থনীতি দুই অবোধ গোঁয়ার রাজনীতির শিকার হচ্ছে না? একদিকে তারা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে আর অন্যদিকে বিরোধীদের অপরাধী কর্মকাণ্ডের বলী হওয়ায় সরকার এ বর্বরতার উশকানিদাতাদের সাথে বসতে রাজি নয়।
সরকারের বক্তব্য ভুল নয়, কিন্তু ১৯৯০-এর পরবর্তী ৪টি গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে দেখা যাচ্ছে প্রধান দুই দলের সমর্থকদের সংখ্যা খুবই কাছাকাছি। ফলে অপরাধীদের পুলিশি ব্যবস্থায় শায়েস্তা করার পথে চললেও ৩টি কারণে সরকারকে আলোচনার কথা ভাবতে হবে - ১. সাধারণ মানুষকে আর আগুনে পুড়তে দেওয়া যায় না, ২. দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস হতেও দেওয়া যায় না, এবং ৩. জনগণের বড় একটি অংশকে উপেক্ষা করাও ঠিক নয়। পরবর্তী নির্বাচনে প্রথম ২টি অপকর্মের খেসারত দেবে বিরোধী দল এবং এসবের ও শেষোক্ত কাজের সুফল পাবে সরকারি দল।
মানুষ তার পাশে যাকে পায় তাকেই পছন্দ করে, ভোট দেয়। বিরোধী দল ভুল করছে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তার দোহাই দিয়ে সরকারও ভুল পথে হাঁটলে জনগণ কোথায় দাঁড়াবে?