Tuesday, December 22, 2015

কালান্তরের বিজয় দিবস

আবুল মোমেন

চুয়াল্লিশ বছর পরে বিজয় দিবসে মনে হচ্ছে গত কয়েক বছরে দেশে এবং পৃথিবীতে যেসব পরিবর্তন ঘটেছে সেগুলো বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা বোঝা যায় না। অমর্ত্য সেন ও কৌশিক বসুর মত দুজন খ্যাতকীর্তি বাঙালি অর্থনীতিবিদসহ পশ্চিমের অনেক বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকও উন্নয়নের বিচারে বাংলাদেশকে বিস্ময় আখ্যা দিয়েছেন। এ বিস্ময়কর অর্জনগুলো এড়িয়ে সঠিক বাংলাদেশকে কি বোঝা যাবে?
১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশ যৌথবাহিনী যখন হানাদার পাকিস্তানি সেনাদলকে পরাজিত করে দেশ দখলমুক্ত করেছিল তখন জাতি ঐক্যবদ্ধ, স্বপ্নে ও প্রত্যাশায় চঞ্চল। সেটা ছিল আদর্শবাদী চিন্তা ও মহৎ স্বপ্নের কাল। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শকে মূলনীতি করে সংবিধান রচিত হয়েছিল। ধর্মবর্ণলিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করে গণতান্ত্রিক ধারায় দেশের অগ্রগতি ছিল লক্ষ্য।
কিন্তু তার জন্যে কি নেতৃবৃন্দ কি মুক্তিযোদ্ধাসহ  দেশের মানুষ প্রস্তুত ছিলেন না। কেন ছিলেন না তা বোঝা যাবে ব্রিটিশ-বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় রবীন্দ্রনাথের সাবধান বাণী থেকে। তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতা অন্তরের সামগ্রী। এ কথায় বোঝাতে চেয়েছিলেন নিজের মধ্যেকার পরাধীনতার প্রবণতাগুলো রেখে স্বাধীনতার সুফল মেলে না। নিজে ব্যক্তিগত রিপুর বশীভূত, ব্যক্তিগত ক্ষুদ্রস্বার্থের দাবির কাছে দুর্বল থাকলে স্বাধীনতা মাত্রা ছাড়িয়ে অর্থহীন হবে। নিজের ক্ষুদ্রস্বার্থকে দেশের ও মানুষের বৃহত্তর কল্যাণের মাঝে বিলিয়ে দিতে না পারলে কীভাবে মানুষটা দেশের হয়ে কাজ করবে? দেশবাসী বুঝে-না-বুঝে, কিংবা অবস্থার গতিকে, একাত্তরের মুক্তযুদ্ধকালীন নয়মাস এই উচ্চ ভাবাদর্শ পালনের স্বাক্ষর রেখেছিল।
কিন্তু মানুষ তো স্বাভাবিক অবস্থায় সামাজিক জীব, সংসারের দায়কে অগ্রাধিকার দিতেই অভ্যস্ত। ষাটের দশক থেকে দেশের ছাত্র-শ্রমিক এবং সচেতন নাগরিকসমাজ রাজনৈতিক সংগ্রামে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবেই লিপ্ত ছিলেন। আর তখন বঙ্গবন্ধুর নির্ভরযোগ্য আবার আকর্ষণীয় নেতৃত্ব পেয়ে দেশে এক অসাধারণ গণজাগরণ ঘটেছিল, আর তার ফলে সৃষ্ট হয় অভূতপূর্ব ঐক্য। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ বাদে বাঙালির রূপান্তর ঘটেছিল সেদিন - ভেতো ভীতু বাঙালি বীরত্বের ডাকে সাড়া দিল, কলহ ও কোন্দল ভুলে এক হয়ে গেল, বাক্যবাগীশ কর্মবিমুখ না থেকে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এর ফল মুক্তিযুদ্ধ এবং ফসল বিজয়।
দুর্ভাগ্য, যুদ্ধকালের এই উদ্দীপনা, এই ব্রতী মনোভাব যুদ্ধপরবর্তী শান্তিকালে দেশগঠনের লড়াই অবধি ধরে রাখা গেল না। প্রায় বিজয়ের পর পরই যেন মানুষ ফিরে গেল তাদের সামাজিক, সাংসারিক সত্তায়। বরং এতদিনের ত্যাগ ও সংযমের পরে অকস্মাৎ যেন ক্ষুদ্র স্বার্থের বাঁধ ভেঙে গেল। একটা অস্থির বিশৃঙ্খল সময় দেশকে গ্রাস করেছিল তখন। এমন অস্থিতিশীল সময়ের সুযোগ নেওয়ার মানুষেরও অভাব ছিল না। একদল বিপ্লবী আদর্শের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামল তো আরেক দল পরাজিত আদর্শের বীজ সংরক্ষণ করে প্রত্যাঘাতের ষড়যন্ত্রে নেমে গেল। দেশের আদর্শ কি পরিকল্পনা সবই ওলটপালট হয়ে গেল। সামরিক স্বৈরশাসনে রাজনীতিক এবং শিক্ষিতসমাজ উভয়ের চরম অবক্ষয় ঘটায় সমাজের বড় ক্ষতি হল। রাজনীতি সম্পূর্ণ আদর্শচ্যুত হয়ে গেল। আদর্শের ভিৎ ছাড়া ছাত্র রাজনীতি তো চলতেই পারে না, হয়ত তাই এর আদর্শচ্যুতি ঘটেছে সবশেষে - নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে। কিন্তু তারপরে অবক্ষয় এত ক্ষিপ্রগতিতে ঘটেছে যে কয়েক বছরেই চলে গেল অপশক্তির গ্রাসে। এখন এর নানান বিকার রাজনীতি ও সমাজ উভয়কেই বড্ড ভোগাচ্ছে।
মার্কিন সমাজ দার্শনিক ড্যানিয়েল বেল ১৯৬৫ সনে পরিবর্তমান মার্কিন সমাজের প্রেক্ষাপটে লিখেছিলেন বই আদর্শবাদের সমাপ্তি - দি এ- অব ইডিওলজি। নব্বইয়ের দশকে এই লক্ষণ আমাদের সমাজেও  দেখতে পেলাম। এই বাস্তবতায় সনাতন বা ধ্রুপদী ধারণা থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বা সুশাসনের মান বিচার করলে হতাশ হতে হবে। গণতান্ত্রিক বিকাশের সাথে মানবাধিকারের সুরক্ষা, আইনের শাসনের নিশ্চয়তা, সকল মত-পথের অন্তর্ভুক্তি, স্বাধীন স্থানীয় সরকার, মানুষের অংশগ্রহণ, নাগরিক অধিকারের সাম্য ও এর সুরক্ষা, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি মোটামুটি সহনীয় মাত্রায় ও মানে চর্চা হওয়ার কথা। এসব ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তবতা প্রত্যাশীত মানের কাছাকাছি নেই - এটা মানতেই হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জন্যে যেমন রাজনীতি চর্চা কঠিন করে রাখা হয়েছে তেমনি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সম্পদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা যায় নি।
কিন্তু এ-ই শেষ কথা নয়। বাংলাদেশ থেমে থাকে নি। বহুকাল আগে মনীষী হুমায়ুন কবীর কবিতার প্রসঙ্গে এই খরস্রোতা নদী-খালের ভাঙাগড়ার দেশে মানুষের উদ্যমশীলতার কথা বলেছিলেন। প্রাণচঞ্চল, খামখেয়ালি দুর্বার প্রকৃতির সাথে বসবাস করে আসা এই জনপদের মানুষের রয়েছে ঘাড় গুঁজে বিপর্যয় সইবার ক্ষমতা আর দুর্যোগের পরেই নবোদ্যমে জীবনজয়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার অফুরন্ত উদ্যম।
এই মানুষ গণতন্ত্র বা সুশাসনের অপেক্ষায় বসে থাকে নি, নিজের মত করে প্রাপ্ত সকল সুযোগ কাজে লাগিয়ে রীতিমত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সরকারি কিছু কর্মীর আন্তরিক ভূমিকা, বেসরকারি সংস্থার দূরদর্শী সহায়তা, বেসরকারি উদ্যোক্তার বিনিয়োগ গ্রামবাংলার পল্লীবধূ আর ভীরু বালিকাদের দলে দলে কর্মীতে রূপান্তরিত করেছে, নি¤œবর্গের খেটে খাওয়া মানুষের বেকারত্ব ঘুচিয়ে বিদেশে রোজগারের পথ খুলে দিয়েছে, কৃষি উৎপাদনে চমকপ্রদ বিপ্লব ঘটতে সাহায্য করেছে। একাত্তরে যখন আমরা বিজয় অর্জন করেছি তখন সাড়ে সাতকোটি জনসংখ্যার খাদ্য সংস্থান করতে পারতাম না, এখন চুয়াল্লিশ বছর পরে তার দ্বিগুণ মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করছেন দেশের কৃষক। প্রত্যেক মানুষের দু’একটা শার্ট আছে, পায়ে আছে অন্তত রাবারের চপ্পল, গ্রামের হাটে মহার্ঘ ফলের সওদা মেলে, মেয়েরা দল বেঁধে স্কুলে যায়, গর্ভবতী নারী স্বাস্থ্য পরামর্শ পান ঘরের কাছেই।  জনমানুষের এই অগ্রগতি মূলত তাদেরই খাটুনির ফসল। একটু খেয়াল করলে বুঝব বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিসর বড় হচ্ছে, তাতে অংশীদারিত্বের ব্যাপ্তিও ঘটছে। যে তিনটি ক্ষেত্রের অবদানে অর্থনীতির বিকাশ ঘটে - মানসম্পন্ন শিক্ষা, পুঁজি সঞ্চারের ক্ষমতা এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন ইত্যাদিতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ফলে যে কোনো পরিস্থিতিতে - প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রকট রাজনৈতিক সংকট কিংবা বিশ্বব্যাংকের মত সংস্থার  উপেক্ষা সবই বাংলাদেশ নিজেই উপেক্ষা করে এগুতে পারে আজ। দেশের এই সামর্থ্যকে উপেক্ষা করা অন্যায় হবে। বাংলাদেশ এগুচ্ছে, বাংলাদেশের অগ্রগতি কেউ থামাতে পারবে না।
গণতন্ত্র এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অধিকার সংকোচনের জন্যে সরকারের দিকে আঙ্গুল তোলা যায়। তোলাই যায়, কিন্তু মনে হয় তাতেই সমস্যা বোঝার এবং তার সমাধানের সূত্র পাওয়ার দাবি করা যায় না। আদতে গত তিন দশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির, বিশেষত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিস্ময়কর যে বিস্তার ঘটেছে তা কেবল সর্বগামী ও সুলভ তা নয়, এর প্রভাবে ব্যক্তি ও সমষ্টির জীবনযাপন এবং মানসজগৎ উভয়েই বড় রকমের গুণগত পরিবর্তনের চাপ তৈরি হয়েছে। মানুষের স্ব স্ব জীবন নতুন ধরনের এক গতি, বৈচিত্র্যময়তা এবং ভোক্তা সুবিধার সম্মুখীন হয়েছে। এতে তাকে জড়িয়ে পড়তেই হচ্ছে। এর ওপর চলাচল ও যোগাযোগের বিশ্বায়ন এবং বাজার অর্থনীতির একচ্ছত্র দাপটেও যাপিত জীবন ও মানস জগতে গুণগত পরিবর্তনের চাপ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এর চাপ দৈনন্দিন আহার্য ব্যবহার্য থেকে সাংস্কৃতিক বিনোদন হয়ে আধ্যাত্মিক চেতনা পর্যন্ত প্রভাবিত প্রসারিত হচ্ছে।
আমার ধারণা, পরিবর্তনের বর্তমান প্রচণ্ড চাপে নিজেদের সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত মনে করছেন সনাতন চিন্তার ধর্মীয় কট্টরপন্থী মানুষ। তাঁরা কখনোই বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে পারেন নি। এই বকেয়া জমেছে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সময় থেকে। আজ তাঁরা কীভাবে নতুন চ্যালেঞ্জর মোকাবিলা করার মত গভীর মনীষার পরিচয় দেবেন? এরকম গোঁড়ামি হয়ত সেক্যুলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তৈরি হতে পারে। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ার দাপট ততটা মরীয়া ও মারাত্মক হবে না - তাই রক্ষা।
আমরা জানি, কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদীদের জঙ্গি তৎপরতার, যেমন আইএস বা আল কায়েদা ইত্যাদির পেছনে আরও স্বার্থ জড়িত আছে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ যেমন কলকাঠি নাড়ে তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈর-শাসকরাও এদের সৃষ্ট অস্থিরতার সুযোগ নেয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও একথাই সত্য যে কট্টরপন্থার এই দীর্ঘমেয়াদী স্থবিরতার পেছনে চিন্তার অচলায়তনের ভূমিকাই প্রধান। আর বর্তমানে মুসলিম জঙ্গিবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণ স্থানীয় মোল্লাদের মধ্যে বহুকালের পুুঞ্জিভূত চিন্তার জড়তা ও জাড্য।
২০০১-এর পর থেকে এটা আর আড়ালে নেই যে দেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি শক্তিবর্ধক টনিক হিসেবে ইসলামি জঙ্গিদের কাজে লাগাচ্ছে। এমনকি দেশ-বিদেশ থেকে এত চাপ সত্ত্বেও বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে রেখে চলেছে, যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি সহানুভূতিও গোপন করছে না। তাছাড়া একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন জঙ্গি আক্রমণ ও জঙ্গি দলের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগও কি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে?
এই প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা থেকে আপাতত বিএনপিকে দূরে রাখার কৌশল নিয়ে এগুনো এবং সেই সূত্রে সরকারের কর্তৃত্ববাদীরূপ ধারণ যেন পরিস্থিতিরই অনিবার্য পরিণতি। হতাশার কথা হল এরকম সময়ে নাগরিকসমাজ কার্যকর এবং গঠনমূলক ভূমিকা নিতে অতীতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন, আজও ব্যর্থ হচ্ছেন।
এসব ব্যর্থতার আড়ালে বাংলাদেশে আরও এক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। সরকারের প্রায় সর্বময় ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পুঞ্জিভূত হয়েছে। এবারের প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬-২০০১ এর হাসিনা নন, কেবল আরও পরিণত হয়েছেন তা নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ও কাজ সম্পর্কে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন, যে আত্মবিশ্বাস দেশের প্রতি অঙ্গীকারের দ্বারা বলীয়ান। উত্তরাধিকারের রাজনীতি তাঁর ক্ষেত্রে যেন নেতিবাচক হয় নি, ইতিবাচক পথেই তিনি একে চালাতে পারছেন।
একটা কথা বোধহয় ভুললে ঠিক হবে না। ইংরেজের সংস্পর্শে এসে পশ্চিমের শিক্ষায় বাংলা ও ভারতবর্ষে কালান্তরের সূচনা হয়েছিল - বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় এমন কথাই লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গত শতকের ষাটের দশক থেকেই আমরা যুগসন্ধি, ক্রান্তিকাল এমনি সব শব্দের মাধ্যমে কালান্তরের কথা বলতে  চেয়েছি। কিন্তু সত্যিকারের কালান্তর এই একবিংশ শতাব্দীর সূচনাতেই এসে হাজির। এর প্রবণতা ও সম্ভাবনাগুলো সমাজের ওপরতলা তেমনটা বুঝতে না পারলেও নিচের তলা তাতে সাড়া দিয়েছে। সমাজ পরিবর্তিত হচ্ছে। তাতে পুরোনো ধ্যান ধারণায় গড়ে ওঠা বসতি থেকে জীবনব্যবস্থা সবই ভেঙে পড়ছে, পাল্টে যাচ্ছে। উট পাখি হয়ে একে অস্বীকার করতে চাইলে ঠকতে হবে। বিএনপি যদি পুরাতনের অচলায়তনকেই রাজনীতিতে ধারণ করতে চায় তাহলে গণতন্ত্র সংহত হবে না। আওয়ামী লীগ সময়ের এই দাবি কতটা বুঝতে পারছে জানি না, কিন্তু মনে হচ্ছে অচলায়তন ভাঙার বারতা শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছেন। তাঁর মধ্যে ক্রমেই যেন নতুন বাংলাদেশের রূপকারের আত্মবিশ্বাসী দেশনেত্রীর রূপ এবং তাঁর মাধ্যমে আগামী দিনের রূপান্তরিত এক আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের ছবি ফুটে উঠছে। বিশ্বব্যাংকের খবরদারি উপেক্ষা করে যেভাবে নিজস্ব অর্থায়নে তিনি পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করলেন তা যেন ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে তাঁর পিতার অসম সাহস ও অসীম আত্মবিশ্বাসে পাািকস্তানের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মোকাবিলা করে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ বীরের জাতিতে রূপান্তরের ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। কালান্তরের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে কী?


***

Thursday, December 17, 2015

স্বাধীনতা ও বিজয়

আবুল মোমেন

প্রথমে আমাদের দাবি ছিল পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দির নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সাথে সাথে জনগণের এ দাবিরও বিজয় হল। কিন্তু নয় মাসের মাথায় ৯২-ক ধারা জারি করে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দিয়ে প্রদেশের জনমত উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় সরকারের একতরফা শাসন চাপিয়ে দেওয়ায় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই বুঝলেন গণতন্ত্রের দাবি জোরালো করা ছাড়া জনগণের মুক্তি সম্ভব হবে না। ১৯৫৬ সনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করলে এ পথেই যেন আমাদের অগ্রগতি শুরু হল। কিন্তু একদিকে সে সরকার টানাপোড়েনের সমস্যায় ভুগেছে আর অন্যদিকে কেন্দ্রে চলছিল পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের বা কেন্দ্রের তাঁবেদার  সরকার ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র। ১৯৫৮ সনের অক্টোবরে জেনারেল আইয়ুব ক্ষমতা দখল করে নিলে সারা দেশে কেন্দ্রের একনায়কী শাসনের সূচনা হয়। সেই থেকে শুরু হল আমাদের গণতন্ত্রের সংগ্রাম।
১৯৬২-র আগে আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন শুরু করা যায় নি। বাষট্টির সেপ্টেম্বরে ছাত্রদের শিক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে এর সূচনা। আইয়ুব কিন্তু যে কোনো সামরিক শাসকের মতই দীর্ঘ মেয়াদে বা আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন। সেভাবেই তিনি ক্ষমতা সংহত করার চেষ্টা করলেন এবং নিজের ব্যক্তিগত ও পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত ক্ষমতা-বলয়ের মধ্যে দেশ শাসনের সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রয়াস চালালেন। ইতোমধ্যে পাকিস্তান সরকার ও পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে বাঙালিদের নানা স্তরে যোগাযোগ ও টানাপোড়েনের অভিজ্ঞতা প্রদেশের সচেতন মহলকে একটা স্পষ্ট বারতা জোরালোভাবেই দিতে পেরেছে। তা হল, পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাঙালির প্রকৃত মুক্তি ও আত্মবিকাশ সম্ভব নয়।
এই প্রেক্ষাপটে স্বায়ত্বশাসনের দাবি চলে এলো সামনে। শেখ মুজিবের ৬ দফাই হয়ে গেল বাঙালির প্রাণের দাবি। এ নিয়ে শেখ মুজিব ও বাঙালি নেতাদের বিরুদ্ধে আইয়ুবের দমনপীড়ন বাড়ল। হুমকির ভাষায় কথা বলতে থাকলেন আইয়ুব-মোনেম দুজনে। এর মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করল।
ছাত্র, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে অনেকেই বুঝে গেলেন স্বাধীনতার কমে বাঙালির চলবে না। এই উপলব্ধি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করে তুলেছিল। ফলে জনগণের প্রাণের নেতা শেখ মুজিবের মুক্তি এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন রূপ নেয় গণ-অভ্যুত্থানে। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান আইয়ুবের পতন ত্বরান্বিত করে।
আইয়ুবের পরে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করে পাকিস্তানের ক্ষমতায় এসেছিলেন আরেক সেনা কর্মকর্তা - জেনারেল ইয়াহিয়া। কিন্তু ততদিনে পূর্ব পাকিস্তানবাসী শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধুরূপে ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে বরণ করে প্রস্তুত হয়েছে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সংগ্রামের জন্যে। ফলে জেনারেল ইয়াহিয়া, জুলফিকার ভুট্টো এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সকল ধারণা নস্যাৎ করে এদেশে আওয়ামী লীগ দুটি ছাড়া সব আসনেই বিজয়ী হল। এ বিজয় দলকে দিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসক হওয়ার অধিকার। কিংকর্তব্যবিমূঢ় পাক-সরকার, রাজনীতিবিদ ও আমলাতন্ত্র আবারও ষড়যন্ত্রের রাস্তা ধরল। কিন্তু তার আগেই তো এখানকার মানুষ স্বাধীনতার জন্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জানবাজি রেখে লড়তে প্রস্তুত হয়ে আছে। পাকিস্তানের জন্যে সংঘাত এড়ানোর একমাত্র পথ ছিল নির্বাচনী ফলাফল অর্থাৎ জনগণের গণতান্ত্রিক অভিমতকে সম্মান জানানো।
তারা তা করতে চায় নি। ভুট্টো, পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তা এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্র এ ব্যাপারে আন্তরিক ছিল না।
ছাত্র-জনতা-বুদ্ধিজীবীসহ সমাজের প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষা যে জায়গায় পৌঁছেছিল তাতে পাকিস্তান সরকারের জন্যে সর্বনিম্ন করণীয় হতে পারত নির্বাচনের ফলাফল মেনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ছয়দফার ভিত্তিকে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন দেওয়া। আর পাকিস্তান এ দাবি না মানলে ঐক্যবদ্ধ নবজাগ্রত বাঙালির সামনেও একমাত্র পথ ছিল - স্বাধীনতা। পাকিস্তানি শাসকদের একগুঁয়েমি, অদূরদর্শিতা এবং বাঙালি-বিদ্বেষের কারণেই শেষ পর্যন্ত বাঙালিকে স্বাধীনতার পথেই হাঁটতে হয়েছে।
ফলে সাতই মার্চ যখন বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ জনতার সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন তাঁর ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা আসতেই হত। প্রাজ্ঞ জনদরদী নেতা কেবল উন্মত্ত পাক-সেনাদের সম্ভাব্য বর্বরতা এড়ানোর পথ খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি শাসক এবং বাঙালি জনতা উভয়ের মনোভাব সেদিন যেখানে ছিল তাতে স্বাধীনতার পথে হাঁটা ছাড়া অন্য পথ ছিল না বঙ্গবন্ধু ও এদেশের মানুষের।
আজ চুয়াল্লিশ বছর পরে পাকিস্তান সরকার আবারও প্রমাণ করল সেদিন বঙ্গবন্ধু এবং এদেশের জনগণ ঠিক কাজটিই করেছিল। কেবল পাকিস্তানি শাসকদের একগুঁয়েমি ও বর্বরতার শিকার হয়ে নয়মাসব্যাপী গণহত্যার সম্মুখীন হয়েছি আমরা। কিন্তু ততদিনে তো বাঙালি একতাবদ্ধ এবং বীর জাতিতে রূপান্তরিত। তাই প্রতিরোধও হল, যুদ্ধও চলল এবং ন্যায় ও সত্যের বিজয়ও হল।


***

Friday, December 4, 2015

সন্ত্রাসের চক্রে জড়িয়ে পড়া কার স্বার্থে?

আবুল মোমেন

একটি সন্ত্রাসী হামলা পাল্টা সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনাই তৈরি করে। প্রতিটি সন্ত্রাসের ঘটনা নৃশংসতার প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। সন্ত্রাস আরও সন্ত্রাস, নৃশংসতা আরও নৃশংসতার জন্ম দেয়। প্যারিসে গত শুক্রবার রাতের নৃশংস সন্ত্রাসের পরপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ ওঁলাদ প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় নৃশংস প্রতিশোধের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় ফ্রান্সের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই হামলা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটবে উগ্র জাতীয়তাবাদী বিদেশি বিদ্বেষী মেরি লিপেনের ন্যাশনাল ফ্রন্ট। প্রতিশোধেরই প্রতিজ্ঞা থেকে আইএস আত্মঘাতের মাধ্যমে পশ্চিমের সাংস্কৃতিক রাজধানী প্যারিসে হামলা চালিয়েছে। প্রতিশোধ ও জিঘাংসা প্রতিশোধ ও জিঘাংসারই জন্ম দিয়েছে। যুদ্ধের মাধ্যমে যুদ্ধকে থামানো যায় না এই উপলব্ধি থেকেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তির পর বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন - যুদ্ধকে জয় করা গেছে, শান্তিকে নয়। তাঁর বাণী সত্য হয়েছে। বলা হয়ে থাকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে সারা বিশ্বে ছোটখাট যুদ্ধে মহাযুদ্ধের চেয়েও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
তদুপরি একথাটাও মনে রাখতে হবে হিংসা বা সন্ত্রাস কখনো ঐক্যের ভিত্তি হতে পারে না। ফলে মুসলিম বিশ্ব, বিশেষত আরবের দেশগুলো তাদের অনৈক্য ও বিভেদের পথেই চলবে। কিন্তু আক্রান্তরা মতপার্থক্য ভুলে সবসময়ই দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়। পশ্চিম, বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না, দ্রুত বৃহত্তর কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলবে এবং প্রতিপক্ষের ওপর দ্বিগুণ শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। প্রশ্ন হল, তাদের তখন বিশ্বস্ত বান্ধব সৌদি রাজতন্ত্র কি পক্ষ বদল করবে? উত্তরটা আমাদের জানা আছে।
বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে সমাজে হানাহানি, বিভ্রান্তি ও অশান্তি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলতে থাকে তখনই শান্তির বাণী নিয়ে নানান ধর্মের আবির্ভাব ও বিভিন্ন ভাবান্দোলনের সূচনা হয়েছে। ইসলাম এরকমই এক অরাজক অবস্থায় নাজেল হয়েছে এ কথা বিশেষভাবে বলা হয়ে থাকে। ধর্মের তাৎপর্য এবং সাফল্য নির্ভর করে মানুষের মধ্যে শান্তি, সমঝোতা ও সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরির সামর্থ্যরে ওপর। দুর্ভাগ্যে বিষয় ধর্মের নামেই পৃথিবীতে হানাহানি হয়েছে  সবচেয়ে বেশি। ঐতিহাসিকরা বলেন রাজ্য জয় বা রাজনৈতিক কারণে যত যুদ্ধ ও প্রাণহানী ঘটেছে তারচেয়ে বেশি হয়েছে ধর্মের নামে। কেন এমনটা ঘটেছে বা ঘটে থাকে তা ঘটনাগুলো তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে।
বিশ্বের বড় সব ধর্মই বিস্তার লাভ করেছে শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে। ইসলামের প্রথম যুগে মুসলিম সমাজে খলিফাই ছিলেন শাসক। আদি খ্রিস্টান সমাজে কিছুকাল রাজা ও ধর্মগুরু একই ব্যক্তি হলেও রাজার পাশাপাশি পোপ এবং শক্তিশালী যাজকসম্প্রদায়ের উত্থান হলেও ফরাসি বিপ্লবের পরে রাষ্ট্র ও চার্চ পৃথক হয়ে যায়। কিন্তু কেবল রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমেই তো ধর্মের বিস্তার ঘটে নি, খ্রিস্টানদের যেমন মিশনারি মুসলমানদের তেমনি পীর-দরবেশ, জ্ঞানী-গুণী, ফকির-সাধুদের মাধ্যমে ধর্ম নতুন নতুন দেশ ও সমাজে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এটি শাসকদের জন্যে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছিল। আব্বাসীয় খলিফাদের আমল পর্যন্ত বৃহত্তর পারস্য সাম্রাজ্য, ভারতবর্ষ, উত্তর আফ্রিকা ও স্পেনে ইসলামের বিস্তার ঘটেছে। এ সময়ে মূলত ফারসি ভাষার মাধ্যমে ইসলামি মনীষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। আন্দালুসিয়ার মুসলিম মনীষীরা ল্যাটিন ও গ্রিক শিখেছিলেন এবং প্রাচীন গ্রিক ও রোমান জ্ঞান ভা-ার থেকে বহু মূল্যবান বই অনুবাদ করেছিলেন। মুসলিম দার্শনিক, বিজ্ঞানী, কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীদের তখন বিশ্বজয়ী অবস্থান।
প্রাচীন গ্রিক, রোমান এবং পারস্যের সমৃদ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃতির মূল্যবান অনেক কিছুই আত্মীকরণের মাধ্যমে মুসলিম সভ্যতার অবিস্মরণীয় অগ্রগতি ঘটিয়েছিলেন। সমঝোতা ও সমন্বয় গভীর প্রজ্ঞার পথ খুলে দিয়েছিল। মনে রাখা দরকার প্রাচীন পারস্যসভ্যতা কেবল বর্তমান ইরানে সীমাবদ্ধ ছিল না, তার বিস্তার ছিল মধ্য এশিয়া পর্যন্ত, প্রভাব ছিল আরও ব্যাপক। ইসলামের প্রভাব এই সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভেতর থেকে কেবল মরমি সুফিবাদ নয় জ্ঞানবিজ্ঞানের নানা শাখায় অসামান্য সব অবদান সৃষ্টি করেছে। পারস্য থেকে মরক্কো হয়ে স্পেন অবধি বিস্তৃত ছিল সম্পন্ন মুসলিম সভ্যতা, যার অবদানই ইউরোপীয় রেনেসাঁস ও আলোকনের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
মুসলিমদের এই সমৃদ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃতিকেই মধ্য এশিয়া থেকে মুঘলরা ভারতবর্ষে নিয়ে এসেছিল এবং এর প্রভাবে সমৃদ্ধ প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় ও সংস্কৃতিতে স্থায়ী রূপান্তর ঘটিয়েছে। এই অবদান ও এই সত্য কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। নরেন্দ্র মোদী বা তাঁর দলবল যতই ঘর ওয়াপসির ধুয়া তুলুক তাতে ভারতীয় সংস্কৃতিতে মুসলিম প্রভাব মুছে ফেলা যাবে না।
বিশুদ্ধতাবাদীরা আদি ইসলামের কথা বলে ইতিহাসকে - অর্থাৎ ইসলামের অগ্রযাত্রার ইতিহাসকেই - অস্বীকার করতে চাইছেন। ইতিহাসের যাত্রাপথ একরৈখিক নয়, মসৃণ নয়, বারবার কঠিন সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে, সেসব মোকাবিলা করে তবেই এগুতে হয়। লক্ষ্য করব শাসকদের দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার সহযোগিতায় ইসলামি বিশ্বের - তীর্থ ঠিক থাকলেও - রাজধানী বা জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র বদল হয়েছে। মদিনা, দামেস্ক, বাগদাদ, কর্ডোভায়  তা স্থানান্তরিত হয়েছে। অটোমান সাম্রারাজ্যে ইস্তাম্বুলই ছিল কেন্দ্র, যদিও তখন বৃহত্তর পারস্যে অনেক উপকেন্দ্র ছাড়াও ভারতবর্ষে মুসলিম সমাজের সমৃদ্ধি ও অবদান বাড়ছিল। এসবই তো মুসলমানদের কীর্তি - এসবকে অস্বীকার করলে তাতে ইতিহাস কি অসত্য হবে না? কিংবা তাতে মুসলমানদের গৌরব বাড়ে না দৈন্য?
দীনতার অহঙ্কারের দাপটের কথা রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। চিত্তের দৈন্য যেমন আত্মিক দৈন্যও তেমনি ভয়াবহ - ভয়ঙ্কর এর পরিণতি, কারণ এটা প্রায়ই আত্মঘাতী পরিণতির তোয়াক্কা করে না। আত্মঘাতী হওয়াটা ইসলামসম্মত নয় জেনেও যাঁরা তরুণদের আত্মঘাতী হওয়ার প্রেরণা দিচ্ছেন তাঁরা কাদের অস্বীকার করছেন? আল্লামা রুমী, আবদুল কাদের জিলানি (রা.), খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রা). কিংবা ইবনে সিনা, ইবনে খালদুন, আল বিরুনীদের অস্বীকার করতে হবে? হাফিজ, ফিরদৌসী, খৈয়ামের মত মহাকবিদের? নজরুলকে?
একেই বলে অন্ধতা, ধর্মান্ধতা।
পশ্চিমের স্বার্থবুদ্ধির কূটচালগুলো যেমন ক্ষমতান্ধ বিলাসী শাসকরা - যেমন সৌদি বাদশাহ - বুঝতে অপারগ তেমনি বুঝতে পারে না ধর্মান্ধ আত্মঘাতী মানুষ, যেমন আইএস। অথচ পশ্চিম বারবার প্রাচ্য ও আফ্রিকাকে পর্যদুস্ত করতে পারছে তার কারণ ক্রুসেড যুদ্ধে পরাজয়ের পর মুসলমানরা যখন দিশেহারা তখন তাদেরই মনীষীদের চর্চিত জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সহায়তায় এরা এগিয়ে গেছে। প্রাচীন ভারতের হিন্দু জ্ঞান ও বিজ্ঞান একসময় সবচেয়ে এগিয়ে ছিল, তাদের গতি থামার পেছনে ধর্মান্ধতা বড় কারণ। তারপর চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিম মনীষীরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় সবচেয়ে অগ্রসর ছিলেন, কিন্তু তারও যে গতি রুদ্ধ হল তার পেছনে যত কারণই থাক, তা কাটিয়ে উঠতে না পারার কারণ কিন্তু ধর্মান্ধতা।
ধর্ম কি পিছুটান হয়েই থাকবে? পিছনে যাওয়ার প্রেরণা দেবে না এগিয়ে চলার? আত্মঘাতী হয়ে এগুনো যায় না, হয়ত প্রতিশোধ নেওয়া যায়, জিঘাংসা চরিতার্থ করা যায়। কিন্তু তাতে জড়িয়ে পড়তে হয় হিংসা-সন্ত্রাসের ক্রমবর্ধমান বিষাক্ত এক চক্রে। এই পরিণতিকে সুফল বলব না বলব হিংসার খেসারত?
আরব বিশ্বের প্রতি পশ্চিম অবশ্যই অবিচার করছে। নিরস্ত্র মানুষকে গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করা যেমন তেমনি ড্রোন হামলা চালিয়ে বাছবিচারহীন হত্যাকা-ও নিকৃষ্ট  অপরাধ। কিন্তু আরব জনগণ কি নিজেদের দেশে পশ্চিমের তাঁবেদার শাসকদের টিকিয়ে রেখে তাদের সহযোগিতা করছে না? অথবা অন্য কথায়, নিজেদের প্রতি একই অবিচার করছে না? নিজের দুর্বলতা রেখে কোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই বিজয়ী হওয়া যায় না। নিজেদের দেশে দেশে শক্তিশালী বিভীষণদের ক্ষমতায় বসিয়ে রেখে প্যারিস বা বার্লিনে, নিউইয়র্ক বা ক্যানবেরায় রক্তবন্যা বইয়ের দেওয়া যাবে কিন্তু তাতে পরিস্থিতি পাল্টাবে না। দেশে দেশে মুসলিমসমাজ আরও বিভ্রান্ত হবে, হয়ত হানাহানিতে, ভ্রাতৃঘাত ও আত্মঘাতে জড়িয়ে পড়বে। এ মর্মান্তিক পরিণতি হয়ত পশ্চিমের জন্যে তামাশার বেশি হবে না।
ইসলামের গৌরব অনুভব করতে হবে, গৌরবময় ইতিহাস উপলব্ধি করতে হবে। তেমনি মানবসভ্যতার অর্জনসমূহের - ধর্মবর্ণ অঞ্চল নির্বিশেষে - উত্তরাধিকার স্বীকার করতে হবে। সত্যকে বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে বাস্তবকে পাল্টানোর কাজে সফল হওয়া যায় না। অন্ধতা সত্য কি বাস্তব দুটিরই উপলব্ধির পথ বন্ধ করে দেয়, অনুভূতি দেয় ভোঁতা করে, এবং মানুষ হিসেবে অর্থাৎ মানুষের মানবিক সত্তাকে, দুর্বল করে দেয়। অমানবিকতা না মনুষ্যত্বের পথ ধর্মের। এ নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া কি মানুষের শোভা পায়?

***


বিএনপির প্রয়োজন দূরদর্শী সিদ্ধান্ত

 আবুল মোমেন

সরকারের দমনপীড়নের মুখে বিএনপি চুপসে গেল। বারবার চেষ্টা করেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। অনেকবারই তোড়জোর করে ঘুরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল দল, কিন্তু মামলা-মোকদ্দমা আর গ্রেপ্তার-শাস্তির চাপে হাল ছেড়ে দিতে দেখা যাচ্ছে।
আমরা নিশ্চয় বিরোধী দলের ওপর সরকারের এই বলপ্রয়োগের নীতিকে সমর্থন করি না। গণতন্ত্রে বিরোধী মত এবং বহুমত থাকবেই। ফলে সরকারের এই অসহিষ্ণুতা নিন্দনীয়।
এই নিন্দা প্রকাশের সাথে সাথে একটু বিস্ময়ও বোধ না করে পারি না যে বিএনপি কেন কোনো আন্দোলন তৈরি করতে পারল না। বিএনপি নেতৃত্ব এ নিয়ে নিশ্চয় ভাবেন, তবে তাঁদের ভাবনা যেন মূলত সরকারের ভূমিকা ও বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ সরকারি বেপরোয়া পীড়নের মুখে মাঠে নামতে পারছে না কর্মীরা এই অভিযোগই তারা জানাচ্ছে, জনসম্পৃক্ত কোনো ইস্যুতেই তারা মাঠে নামছে না।
অতীতে বাংলাদেশ এরকম পরিস্থতি দেখেছে। ছয় দফার আন্দোলনের সময় আইয়ুব-মোনেম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রায় সকল প্রধান নেতাকেই জেলে ঢুকিয়েছিল, মামলা-মোকদ্দমায় ফাঁসিয়ে রেখেছিল। তখন দলের মহিলা নেত্রীরা, তরুণ নেতা, ছাত্র সংগঠন ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন নানা কৌশলী কর্মসূচী দিয়ে তাদের রাজনীতিকে চাঙ্গা রেখেছিল। বিএনপির এসবই আছে, কিন্তু তারা নিষ্ক্রিয়, কেবল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে তাদের চেহারা ও কণ্ঠস্বরটুকু পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতিতে এটুকুতে কাজ হবে না। হচ্ছেও না।
এর মূল কারণটা বলা দরকার।
বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি পর্ব কেবল গৌরবময় তা নয়, দেশের স্বাধীনতার পেছনে মূল ভূমিকা এ দুটিরই - একটি ভাষা আন্দোলন ও  ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তার পক্ষে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন আর অন্যটি হানাদার-দখলদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এই দুটি সংগ্রামেই আওয়ামী লীগ কেবল ওতপ্রোতভাবে যুক্ত থাকে নি, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। এ হল বাস্তবতা। বিএনপি স্বাধীনতা-পরবর্তী দল, ফলে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী আন্দোলনে তার যুক্ত থাকার সুযোগ ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনীতি দাঁড় করাতে গিয়ে তারা দেশের ইতিহাসের গৌরবময় দুই পর্ব সম্পর্কে নিজেদের অবস্থানকে দুর্বল তো রেখেছেই, ক্ষেত্রবিশেষে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি বা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার সাথে সম্পৃক্ত বাংলা নববর্ষ, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, লালন উৎসব ইত্যাদিতে এ দলের ভূমিকা নেই বললেই চলে। অথচ স্বাধীনতার পূর্ব বা পরবর্তী যে কোনো সামরিক-স্বৈরাচারের আমলে যখন প্রত্যক্ষ রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা চলে বা রাজনীতিকদের পক্ষে কাজ করা মুশকিল হয় তখন এসব উপলক্ষকে ঘিরে ছাত্র সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানই মাঠে সক্রিয় থেকেছে ও রাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে জিইয়ে রেখেছে। আর এসব উদ্যোগের রাজনৈতিক সুফল একচেটিয়াভাবে পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে একদিকে বাংলাভাষা, বাংলা সাহিত্য, রবীন্দ্র-নজরুল-বাউলের গানসহ বাঙালি সংস্কৃতি এবং অন্যদিকে মুক্তযুদ্ধের প্রকৃত আদর্শ ও চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুসহ এর নেতৃত্ব সম্পর্কে কী ভাবনা তা স্পষ্ট নয়।
স্পষ্ট হল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামির সাথে গাঁটছড়া, এবং তারই সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি পক্ষপাত, এমনকি দেশের ধর্মান্ধ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর প্রতি সহানুভূতি।
একটা বিষয় স্পষ্ট, এদেশের সিংহভাগ মানুষ ধর্মে মুসলমান এবং যথেষ্ট ধর্মভীরু বটে কিন্তু ভাষা, সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অতীতের বিভ্রান্তি তারা কাটিয়ে উঠেছে। আর যে দেশের সিংহভাগ মানুষ তরুণ তাদের মনোভাবটাও বোঝা দরকার। তাদের কেউ কেউ জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে বটে কিন্তু তা-ও ঘটছে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা বিশ্বের ইরাক-লিবিয়া-আফগানিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য নীতির কারণে। অধিকাংশ তরুণ তার মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের অংশীদার হতেই ভালোবাসে। বাংলাদেশ এ দুটি অধ্যায় ও অর্জনকে কী করে অস্বীকার করবে?
তদুপরি নাগরিকসমাজের সচেতন ও সৃজনশীল অংশ আপোসহীন আবেগের সাথে এ দুটি বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিএনপি নেতৃত্ব এ বিষয়টি হয় অনুধাবন করছে না অথবা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর গুরুত্ব স্বীকার করছে না।
এর ফলে সাধারণভাবেই ছাত্র ও সচেতন নাগরিকদের কাছে বিএনপির আবেদন কমে গেছে। বরং জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। আর একুশের বইমেলা, বাংলা নববর্ষ, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, লালনমেলা, বাউল উৎসব ইত্যাদি বাঙালির প্রাণের উৎসবে কোথাও বিএনপি নেতা বা বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সক্রিয়তা বা অংশগ্রহণ দেখা যায় না। এভাবে সমাজের সচেতন সক্রিয় সৃজনশীল অংশের কাছে বিএনপি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে।
এভাবে সমাজের মূলধারার বিপরীতে বা বাইরে থাকতে গিয়ে, অনেকের সন্দিগ্ধ মনে প্রশ্ন জাগছে, দলটি কি নানা ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়ছে না?
সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছে সত্য। সাধারণত সরাসরি মাঠের রাজনীতি সম্ভব না হলে যেসব বিকল্পের সন্ধান করে বিরোধী শক্তিগুলো তার একটি ষড়যন্ত্র। অতীতে আওয়ামী লীগ বিকল্প হিসেবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ছাত্র আন্দোলনের সহায়তা নিয়েছিল ও পেয়েছিল। ফলে তারা পাক সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেও নিজেরা ষড়যন্ত্রে জড়ায় নি। এতে আখেরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাথা উঁচু করে বিজয়ী বেশে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে দলটির পক্ষে। বিএনপি এ ধরনের প্রকাশ্য প্রত্যক্ষ রাজনীতি বা রাজনৈতিক কার্যক্রম দাঁড় করাতে পারছে না। মাঝে মাঝে তাদের কোনো কোনো নেতা বা জোটভুক্ত সংগঠনের নেতা-কর্মী কিংবা সমর্থক নাগরিকদের গোপন তৎপরতার সন্ধান মিলছে। এতে রাজনৈতিক আন্দোলন দাঁড় করানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে বিএনপির জন্যে।
আমার মনে হয় মাঠের অবস্থা ও বাস্তবতা পর্যালোচনা করে বিএনপিকে তার নীতি-আদর্শ ও কার্যক্রম ঠিক করতে হবে। আজকের দিনে রাজনীতিতে ধর্ম ও ভারতবিরোধিতার ধুয়া তুলে ব্যাপক কোনো আন্দোলন বা সুবিধা আদায় করা যাবে না। নাগরিকসমাজ ও বামপন্থীরা পরিবেশ রক্ষার যে ধারাবাহিক আন্দোলন করছে তাতে বিএনপি নেই। সাম্প্রতিক ইস্যুভিত্তিক যেসব আন্দোলন - যেমন নতুন পে স্কেল নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন, তাতেও এ দলটি নেই, নেই তাদের কোনো বক্তব্য। যেখানে নাগরিকসমাজ অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ভাষা-সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে একটি প্রগতিশীল অবস্থানেই রয়েছে সেখানে তাদের পক্ষে বিএনপিকে সহজাত বন্ধু ভাবা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের জন্যে এ অনেকটা সরকারকে নিজের ঘরের মানুষদের সামলানোর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ বাস্তবতায় বিএনপি দর্শকে পরিণত হচ্ছে।
আবার বিএনপির প্রতি সরকারি আচরণকে সমর্থন করতে না পারলেও বিএনপির অবস্থানের কারণে সচেতন জনগণ ও ছাত্রতরুণরা অধিকাংশই এসব ইস্যুতে দর্শকের ভূমিকাই পালন করে যাচ্ছে।
দর্শকের ভূমিকা থেকে খেলোয়াড়ের ভূমিকায় তারা কি এক হবে? সেটা নির্ভর করবে বিএনপির নেতৃত্বের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ওপর। সেটা কি অদূরভবিষ্যতে তারা নিতে পারবে?


***