Saturday, February 7, 2015

দূতিয়ালির উদ্যোগ নিতে হবে দ্রুত

আবুল মোমেন

বিবদমান দুই রাজনৈতিক দলের শীঘ্র সংলাপে বসার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। প্রধান বিরোধী জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও দীর্ঘ হরতালের কবলে পড়ে জনজীবনে স্বাভাবিকতা নেই। আজ ৩৪ দিন ধরে এই অবস্থা চলছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার হয়েছে ৮৬ জন, আর আহত হয়ে মরণযন্ত্রণায় আছে তিনশতাধিক। রেল-বাস-টেম্পো-রিকসা পুড়ছে। একদিকে সাধারণ মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে অন্যদিকে এই অনাচার ও অচলাবস্থা তাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। এবং তা হওয়া প্রয়োজন শীঘ্র।
কিন্তু তা কীভাবে হবে? দুই প্রধান দল তো দুই বিপরীত প্রান্তে অনড় অবস্থান নিয়ে গোঁ ধরে আছে। আমি বলব এ অবস্থায় নাগরিকসমাজকে মাঠে নামতে হবে। এ অভিজ্ঞতা আমাদের জন্যে নতুন নয়। নব্বইয়ের গণঅভ্যূত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বৈরাশাসকের ক্ষমতা-ত্যাগ, ক্ষমতা হস্তান্তর এবং অন্তর্বতী সরকার নিয়ে দুই প্রধান জোটের ঐকমত্য তৈরির কাজটি তো নাগরিকসমাজই করেছে। তাঁদের মধ্যে প্রবীণ কয়েকজন, যেমন সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, ব্যারিষ্টার ইশতিয়াক আহমেদ এবং আরও কয়েকজন, দুই পক্ষের সাথে আলোচনা করে উত্তরণের রূপরেখা তৈরিতে দূতিয়ালি করেছিলেন। এভাবেই সেদিন তিনজোটের ঐতিহাসিক রূপরেখা তৈরি হয়েছিল।
এ ধরনের কাজ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে হয় না। যেসব বুদ্ধিজীবী টক-শো বা অন্যান্য মিডিয়ায় নিজেদের বক্তব্য ও অবস্থান তুলে ধরেছেন তাঁরা আর একাজের জন্যে উপযুক্ত হবেন না। এ কথা ঠিক যে টক-শো ও মিডিয়ার মোহে এদেশের বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীদের সিংহভাগ মজেছেন। তবুও মনে করি এখনও কিছু বর্ষীয়ান পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী আছেন যাঁরা নিজেদের বিবেকের নির্দেশনায়ই পথ চলেন। বিশেষভাবে এমন মানুষ চাই যাঁদের নিয়ে বিতর্ক নেই, যাঁদের সততা-দক্ষতায় মানুষের আস্থা থাকবে। যাঁরা অন্ধ দলবাজ তাঁরা এমন মানুষকে অপছন্দ করেন আমরা জানি। কিন্তু এখন আম জনগণের আস্থাভাজন হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অন্ধ দলবাজরা বরাবরই সংখ্যায় অল্প। তাদের গলার আওয়াজ বড় হলেও জনসমর্থন খুবই কম।
আমাদের মনে আছে ষাটের দশকে আইয়ুব আমলে রাজনৈতিক সংকটকালে গণতন্ত্রের বাতাবরণ উন্মোচনের ক্ষেত্রে নয় নেতার বিবৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। নব্বইয়ের অভিজ্ঞতার কথা তো আগেই বলেছি।
আমরা আশা করব এবং আহ্বান জানাব, বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীদের কয়েকজন মিলে সমস্যা সমাধানের এক বা একাধিক ফর্মূলা নিয়ে এগিয়ে আসবেন। দেরি করা উচিত হবে না। প্রতিদিনই জনভোগান্তি বাড়ছে এবং হিংসা ও বিদ্বেষের আগুন বেড়ে চলেছে।