Wednesday, March 18, 2015

শিক্ষা কিংবা রাজনীতি ছেলেখেলা নয়

আবুল মোমেন

আমরা নিশ্চিত জানি কোনো রাজনৈতিক দলই শিশুদের প্রতি বিরূপ নয়। শিশুদের ক্ষতি হোক এমনটা কেউ চাইতে পারে না।
কিন্তু বিরোধী দলের ডাকে যে হরতাল-অবরোধ চলছে তাতে একতরফাভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। কারণ হরতাল মোটামুটি কাগুজে আন্দোলনে পরিণত হয়েছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত বাকি সবই চলছে। স্বাভাবিকভাবে চালু থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সমর্থকদের কল-কারখানা এবং বাণিজ্যিক অফিসও রয়েছে। শুধু হতে পারছে না পড়াশুনা।
এটা বলে বোঝানোর দরকার নেই শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হলে জাতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা আজ বিরোধী দলে আছেন তারা একদিন সরকারে যাবেন, যেমন অতীতে ছিলেন ক্ষমতায়। তাঁদেরই দেশ চালাতে প্রয়োজন হবে শিক্ষিত দক্ষ কর্মীদল। আজকের শিশু ও শিক্ষার্থীরাই তো দেশের ভবিষ্যত। দেশের ভবিষ্যত নষ্ট করে দেশের মানুষের উপকার করা তো সম্ভব নয়। শিশুদের জন্যে এটি একটি অরাজক পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতই পড়া দেওয়া হোক, বাড়িতে পড়তে বসুক, সেটা ঠিক নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার মত সুফল দেবে না। ব্যক্তিগত যোগাযোগের সূত্রে জানতে পারি যে শিশুরা স্কুলের নিয়মের বাইরে চলতে চলতে পড়তেই চায় না। এ বয়সে এভাবে পড়ায় মন বসে না, খেলার দিকে মন পড়ে থাকে। এ খেলাও কোনো কাজের খেলা হবে না। তাদের তো মাঠে গিয়ে ঠিক মতো খেলার উপায় নেই। ঘরের মধ্যে ডানপিটেমি হয়, খেলা হয় না। কারণ খেলাও একটা নিয়মবদ্ধ শৃঙ্খলার বিষয়।
রাজনীতিও একটা ডিসিপ্লিন। রাজনীতি করেই রাজনীতিবিদ দেশ শাসন করবেন, দেশকে আইনের মাধ্যমে শৃঙ্খলায় চালাবেন। রাজনৈতিক আন্দোলনের নিয়মনীতি আছে। এ কোনো ছেলেখেলা নয়। মানুষের প্রাণহানি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ হতে পারে না। ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের সময় পাঞ্জাবের চৌরিচৌরাতে কয়েকটি প্রাণহানি ও নাশকতার ঘটনা ঘটলে এর নেতা মহাত্মা গান্ধি সারা ভারতবর্ষের অসহযোগ আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
আজ এদেশে শুধু পেট্রোল বোমায় পুড়ে মারা গেছে শ’খানেক মানুষ। এ বীভৎস কাণ্ড চলছে দু’মাসের ওপর। কিন্তু সাধারণের প্রাণঘাতি এ ‘আন্দোলন’ চলছেই। রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে এবং মানুষের প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা কিছুতেই চলতে দেওয়া উচিত নয়।
একইভাবে সরকারি বাহিনীর ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে ছেলেখেলা এবং মানুষের প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলাও অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। বন্দুকযুদ্ধেও কম প্রাণহানি হয় নি।
এভাবে দিনে দিনে আমরা আইনের বাইরে বলে যাচ্ছি। রাজনীতিকদের টানাপোড়েনে দেশটাই কি আউটল হয়ে যাবে নাকি!
আমাদের আইনের কাছে নিয়মের কাছে ফিরতে হবে। সর্বত্র শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নয়ত শাসক থাকবেন, তাঁদের শক্ত শাসনদণ্ডও চলবে, কিন্তু তার তলে তলে ও ফাঁকে ফাঁকে সমাজে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়বে। ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়বে, অপরাধ বাড়বে। মানুষের জীবনে শান্তি স্বস্তি চলে যাবে।

***

No comments:

Post a Comment